স্টাফ রিপোর্টার : আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এজন্য দায়ী কে সেটাও চিন্তা করা উচিত।’

পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা অফিসারদের অংশগ্রহণে ‘ডাইভারশন ফ্রম দ্য পুলিশ স্টেশন আন্ডার দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

শনিবার সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস ও ইউনিসেফ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

ইমান আলী বলেন, ‘আমি নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলাম তাদের শিশু বিচারব্যবস্থা দেখার জন্য। সেখানে আমাকে বলা হয়েছিল যে, সংশ্লিষ্ট থানা তারা ৭০-৭৫ ভাগ শিশু আসামির মামলা নিষ্পত্তি করে। ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন যান কোর্টে। আবার কোর্টে যাওয়ার পর কোর্ট থেকে আরও ১০-১৫ ভাগ ডাইভারশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। আজ এখানে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি ডাইভারশনের ব্যাপারে আলাপ করার জন্য।

তিনি পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের সর্বপ্রথম মনে রাখতে হবে আমরা যাদের নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি বা করছি তারা হচ্ছে আমাদের দেশের শিশু। শিশুরা নিষ্পাপ হয়, অবুঝ হয়। ঠিক চিন্তাভাবনা করে কোনো কাজ করে না। এ কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আরও বলেন, ‘শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এজন্য দায়ী কে- সেটাও আমাদের চিন্তা করা উচিত।’

‘একটা শিশু খাবার চুরি করে। খাবার চুরি করে কেন? তার পেটে ক্ষুধা লাগলে খাবার চুরি করে। একটা মোবাইল চুরি করে কেন? তার বন্ধুর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার জন্য নয়। মোবাইল চুরি করে সেটা বিক্রি করে যে টাকাটা পাবে সে টাকাটা দিয়ে সে তার প্রয়োজনীয় কিছু একটা কিনবে। মা-বাবা ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পারলে শিশুরা খারাপ পথে চলে যায়।’

শিশুদের খারাপ কাজে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে এটাই মনে রাখতে হবে, শিশুরা খারাপ পথে যায় খারাপ কাজ করে, চুরি করে, মারামারি করে, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো একটা কারণ আছে। যার জন্য আমি বলব যে শিশুরা এই খারাপ কাজ বা খারাপ ব্যবহারের জন্য দায়ী নন। শিশুরা মারামারি করে কারণ তাদের পরিবারের মধ্যে মারামারি হয় বলে এটাকে জীবনের অংশ বলে মেনে নেয়। যে ঘরে দৈনন্দিন মারামারি হয় সে ঘরে শিশুরা বড় হচ্ছে মারামারি দেখতে দেখতে। মারামারি তাদের জন্য কিছুই না।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (ইনস্টিটিউশন) মো. আবু মাসুদ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরীন প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০১৯)