প্রবাস ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবিতে কানাডায় ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর গ্রুপ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শিত ছবিতে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন বাবু।

১লা সেপ্টেম্বর রোববার কানাডার টরেন্টো ডেনটোনিয়া পার্কে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক জনাব শামসুল হুদা। প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন কানাডা ইমিগ্রেশন, রিফোজি ও নাগরিকত্ব মন্ত্রী আহমদ ডি হোসেইন, এমপি সালমা জাহিদ, এমপিপি রিমা বার্ন্স-মেকগ্রো, এমপিপি ডলি বেগম ও এমপিপি মাইক্যাল কটিঊ।

এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আহমদ ডি হোসেইন বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা রিফোজিদের মায়ানমারে প্রত্যাবাসনে কানাডিয়ান সরকার বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে কাজ করছে। এমপি সালমা জাহিদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি কানাডা সরকার ও প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডুর বিশেষ নজরে আছে। এমপিপি মাইক্যাল কটিঊ বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এক মহত দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন বিশ্বাসী এই দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হবে। কানাডিয়ান সরকার ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহব্বান জানাই রোহিঙ্গা রিফোজিদের মায়ানমারে পুর্ণ নাগরিত্ব দিয়ে পুর্ণবাসন করাতে এগিয়ে আসুন। ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল গফফার এর সভপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সেচ্ছাশ্রম প্রধান করেন সোহেল শাহরিয়ার রানা, শারিফুল হক ও মম কাজী।

ভাষা সৈনিক শামসুল হুদা বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশের পক্ষে এতোগুলো রোহিঙ্গার দায়ভার একা বহণ করা সম্ভব না। রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। এই সমস্যাটি সমাধানে বিশ্বের অন্যান্য দেশেগুলোর বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা উচিত, অন্যথায় সামনে বিশ্ববাসীকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

অন্যান্য বক্তারাও এই সমস্যা সমাধানে কানাডা, আমেরিকা, চীন, রাশিয়াসহ মোড়ল দেশগুলোকে বাংলাদেশের পাসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা ফোজিত শেখ বাবু বলেন, শুরুতেই ধন্যবাদ জানায় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি মমতায়ী মায়ের মতো নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রান বাচানোর জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি শুধু রোহিঙ্গাদেরই আশ্রয় দেননি, তিনি আশ্রয় দিয়েছেন পুরো বিশ্ব বিবেক ও মানবতাকে। বর্তমানে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক শান্তির দেশ এটাই তার প্রমান।

তিনি বলেন, আজকে আমাদের ছবির মাধ্যমেই সব প্রমানিত, তারপরও দু-চার কথা বলতে হয়- আজকে রোহিঙ্গারা যেমন দুঃখ-দুর্দশা কষ্ট ভোগ করছে আশির দশকে আমিও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রের একটি বস্তি এলাকায় দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে বড় হয়েছি। সুতরাং আমি তাদের কষ্ট বুঝি। আর আমাদের এই দুঃখ-দুর্দশার মর্ম বুঝে ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লড়াকু সৈনিক আমাদের স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপতিক এর সহযোগিতায় আমরা আমাদের মানবাধিকার ফিরে পাই এবং বর্তমানে আমরা খুব সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করছি। ঠিক একই অবস্থা রোহিঙ্গাদের। তাই এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রয়োজন বিশ্ববাসীর সজাগ দৃষ্টি। তবেই তারা ফিরে পাবে তাদের মাতৃভূমি ও মানবঅধিকার। বাংলাদেশেও ফিরে আসবে সুন্দর পরিবেশ ও স্বস্তি।

তিনি আরো বলেন, ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ যে আশ্রয় দিয়েছে এর অর্থ এই নয় যে তাদেরকে সারা জীবন রাখতে হবে। একটি বৃহত জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষুদ্র কোন জাতিসত্ত্বা বসবাস করলে সেই জাতির প্রতি মানবাধিকার লংঘিত হয়। সেখান থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন উশৃঙ্খল গ্রুপ। তাই এই রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশের হুমকি নয়। হুমকি সারা বিশ্বের জন্য। আর এই ব্যাপারে সকলের সজাগ দৃষ্টি ও সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক ও রিপটারদেরকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা রিফোজি বিষয়ে সচেতনতা মুলক আলকচিত্র প্রদর্শনী করতে চাই যদি আপনাদের সহযোগিতা পাই।

আমার ও অন্য যাদের ফটোগ্রাফি, দৈনিক যুগান্ত পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন জয়, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার ফটোসাংবাদিক হারুনুর রশিদ, ডেইলি নিউ এজ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মোঃ সৌরভ, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফো এর ফটো সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মোমিন, দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক ফজলে এলাহী ওমর, ইত্তেফাক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রেহানা আক্তার, আবুল হোসেন ফটোগ্রাফার ও মো: গোলাম কিবরিয়া সাইমন ফটোগ্রাফর।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯)