আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁয়ার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভারতের মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ এর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) এক কর্মকর্তা বলেছেন, ৯৭৮ কোটি টাকার এই মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ এর মিশন পুরোপুরি ব্যর্থ নয়।

ভারতীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ১ টা ৪০ মিনিট থেকে ১টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারের। কিন্তু অবতরণের আগ মুহূর্তে সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়ায় সেটি আদৌ অবতরণ করতে পেরেছে কিনা, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য ইসরো পায়নি।

অভিযানের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে বিক্রম ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইসরোর কর্মকর্তারা বলেছেন, রোভার প্রজ্ঞান-সহ ল্যান্ডারটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে নাকি শুধুই সংযোগ ছিন্ন হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে ইসরো।

শনিবার সকালের দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরোর এক বিজ্ঞানী দেশটির বার্তাসংস্থা আইএএনএসের কাছে দাবি করেন, বিক্রম ল্যান্ডারটি ধ্বংস হলেও অরবিটার হিসেবে চন্দ্রযান-২ এর ৯৫ শতাংশই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেটি চাঁদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে সফলভাবে ঘুরছে।

ভারতের বিশাল ব্যয়বহুল চন্দ্রযান-২ এর চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁয়ার মিশনের মেয়াদ এক বছর। ইসরোর ওই বিজ্ঞানী আশা প্রকাশ করে বলেন, এক বছরের মিশনে চন্দ্রযান-২ চাঁদের বেশ কিছু ছবি তুলে ইসরোর গবেষণা কেন্দ্রে পাঠাতে পারবে।

সেই ছবিতে ল্যান্ডার বিক্রমের শেষ পরিণতি কী হয়েছে, সেটি ধ্বংস হয়েছে নাকি সংযোগ বিছিন্ন অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটিও জানা যেতে পারে। ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান যদি নষ্ট হয় তাহলে চন্দ্রযান-২ এর মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে। বাকি ৯৫ শতাংশ অক্ষত থাকবে বলে দাবি করেছেন ভারতীয় এই বিজ্ঞানী।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। প্রথমটি অরবিটার; যার ওজন ২ হাজার ৩৭৯ কেজি এবং পে লোডস রয়েছে ৮টি, দ্বিতীয়টি ল্যান্ডার বিক্রম; ওজন ১ হাজার ৪৭১ কেজি, পেলোডস রয়েছে চারটি এবং সর্বশেষ অংশ রোভার প্রজ্ঞান, যার ওজন ২৭ কেজি; পে লোডস আছে দুটি।

গত ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম। ভারতের ভারী লিফট রকেট জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক-থ্রিতে চড়েগত ২২ জুলাই ৯৭৮ কোটি টাকার চন্দ্রযান-২ চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল।

কয়েক ধাপে পৃথিবীর কক্ষপথে থেকে বেরিয়ে, সেটি প্রবেশ করে চাঁদের কক্ষপথে। শনিবার ভোররাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা ছিল ল্যান্ডারের। ভোর ৬টার দিকে সেই ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসার কথা ছিল রোভার প্রজ্ঞান। শুক্রবার দিবাগত রাতে চন্দ্রযান-২ এর চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ইসরোর চেয়ারম্যান কৈলাসাভাদিভো শিবান বলেন, এই অভিযানের সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক চলছিল। ২ দশমিক ১ কিলোমিটার পর্যন্ত চন্দ্রযানের স্বাভাবিক কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ল্যান্ডারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় অভিযান থমকে গেছে। তবে চন্দ্রযান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএফপি, আইএএনএ।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯)