রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দারুল উলুম চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (সাময়িক দরখাস্ত প্রত্যাহারকৃত) জামায়াতের রুকন হত্যা ও নাশকতাসহ এক ডজনের বেশি মামলার আসামী আব্দুল কাদের হেলালীকে অনৈতিকভাবে অধ্যক্ষ বানানোর চেষ্টার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সস্মেলন করে এ লিখিত অভিযোগ করেন ওই মাদ্রাসার জিবি কমিটির সভাপতি ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আব্দুল কাদের হেলালী ১৯৮১ সালের ৫ অক্টোবর আরবী প্রভাষক হিসেবে দারুল উলুম চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন। বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চাকুরিবিধি অনুযায়ি ১০ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকার পরও অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৯০ সালের ১৩ আগষ্ট অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১২ সালে তিনি ফতেপুর গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জেল হাজতে গেলে তৎকালি জিবি কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে গেলে আদালত বরখাস্ত আদেশ প্রতাহার করে তাকে যোগদানের নির্দেশ দেন। ১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জিবি মিটিংএ তাকে যোগদানের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিন বার চিঠি দেয়। একপর্যায়ে তিনি ১৭ সালের ১৯ ফেব্র“য়ারি প্রতিষ্ঠানে এসে শিক্ষক হাজিরা খাতায় কৌশলে বিগত ১১ , ১২ ও ১৩ ফেব্র“য়ারি তারিখের জায়ংগায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিবি সদস্য আবু তালেব সরদার, রুহুল আমিন সরদার, আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আনছার আলী।

সাক্ষর করেন । পরবর্তীতে জিবি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে না আসায় ওই সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি ও ৪ এপ্রিল যথাক্রমে রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে ও অফিস পিওন মারফৎ পৃথক দু’টি কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই বছরের ২২ জুলাই তিনি জিবি সভাপতি বরাবর এক চিঠিতে উল্লেখ করেন যে অজ্ঞাত কারণে তিনি প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছেন না। কাদের হেলালীর দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে জিবি কমিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুবিধার্থে মোঃ মনিরুজ্জামানকে চলতি দায়িত্ব পালন করার কথা বলেন। সেখান থেকে অদ্যাবধি মোঃ মনিরুজ্জামান চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চলতি বছরের ২৮ মসার্চ কাদের হেলালী সন্ত্রাসীদের নিয়ে মাদ্রাসায় ঢুকে হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে দু’ মাসেরও বেশি দিন ‘এ’ লেখা জায়গায় ‘পি’ লিখে গায়ের জোরে নিজ দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি (নুরুল গক) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। গত ৫ মে কাদের হেলালী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে আবারো প্রতিষ্ঠানের চেয়ার দখল করার চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে আদালতে একটি মামলা করি। যাহা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়,পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই গত ১ত জুন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে জিবি আব্দুল কাদের হেলালীর বিরুদ্ধে অন্যায় অবিচার ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। অধ্যক্ষ হেলালীকে মাদ্রাসায় যাওয়া ও অবস্থানে বাধা সৃষ্টি করা, হাজিরা খাতায় সাক্ষর করতে না দিয়ে বা লুকিয়ে রাখা, তার বিরুদ্ধে জিবি সদস্যরা কয়েকটি ফৌজদারি মামলা দেওয়া, নিয়ম বহির্ভুতভাবে বরখাস্ত করে রাখা ও বেতন ভাতার বিল পাস না করে পরিবারের প্রতি অমানুষিক জুলুম করার কথা বলা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে হেলালীকে অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করার অভিযোগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সাড়ে নয় বছরে দাখিল পাস আব্দুল কাদের হেলালী মানবাধিকার কর্মী ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম আলী হত্যা ছাড়াও তিনি কমপক্ষে ১০টি নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। ওইসব মামলার বাদি পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। এতে জিবি কমিটির সদস্যদের কোন ভূমিকা নেই। এরপরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে হেলালীকে অনর্থক রক্ষার জন্য মিথ্যা ও কাল্পনিক প্রতিবেদন দিয়ে তা মাদ্রাসা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে জিবি কমিটির সদস্যদের অহেতুক সম্মানহানি ও হয়রানি করে চলেছেন।

সংবাদ সস্মেলনের মাধ্যমে জামায়াতের রোকন আব্দুল কাদের হেলালী ও তার দোসর কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, শিক্ষামন্ত্রীসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিবি সদস্য আবু তালেব সরদার, রুহুল আমিন সরদার, আবু বক্কর ছিদ্দিক ও আনছার আলী।

জানতে চাইলে আব্দুল কাদের হেলালী বলেন, বর্তমান জিবি কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন তাকে অন্যায়ভাবে যোগ দিতে দিচ্ছে না।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন প্রথম প্রতিবেদন সম্পর্কে অস্বীকার না করেই বলেন, তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আইন অনুযায়ি সব কিছু করেছেন। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর নির্দেশে ওই মাদ্রাসায় নতুন করে তদন্ত করতে গেলে উভয়পক্ষকে সাত দিনের মধ্যে লিখিত বক্তব্য দিতে বলা হয়। জিবি সভাপতি আজো তা না দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন এটা ঠিক করেননি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৯)