রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : দেশের বৃহত্তর স্থাপনা বঙ্গবন্ধুসেতুতে নাশকতার পরিকল্পনা পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার(১০ সেপ্টেম্বর) গোপন বৈঠকের প্রস্তুতিকালে পরিকল্পনাকারী ৩৬ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে ওই পরিকল্পনা পন্ড করা হয়। বুধবার(১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। 

পুলিশ জানায়, দেশের বৃহৎ স্থাপনা বঙ্গবন্ধু সেতুতে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল জামায়াত-শিবির। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আগেও তারা নৌকা ভ্রমনের নামে সেতু এলাকায় রেকি করেছে। তারা নৌকা ভ্রমনে গিয়ে সরকার উৎখাতে নানাবিধ পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা ও আপত্তিকর শ্লোগান দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে তারা বঙ্গবন্ধু সেতুতে নাশকতার জন্য যমুনা নদীতে নৌকা ভ্রমনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলীন বাজারে সমবেত হয়। গোপনে খবর পেয়ে হেমনগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ নৌকায় ওঠার সময় অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে কিছু জেহাদী বই, নাশকতার জন্য উঠানো চাঁদার রশিদ, সাউ- সিস্টেম এবং খাওয়া-দাওয়ার সামগ্রী জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর ও গোপালপুরের মির্জাপুর গ্রামের মৃত খন্দকার মাহবুবুর রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা রঞ্জু(৫৪), গড়ালিয়া গ্রামের মৃত তৈয়ম শেখের ছেলে মো. হাসেন আলী(৫৫), বেতবাড়ী গ্রামের মো. মজিবর রহমানের ছেলে মহিউদ্দিন(২২), দক্ষিণ গোপালপুরের আছর আলীর ছেলে মো. ফারুক হোসেন(৩০), গাংগাপাড়া গ্রামের মনছব আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ(৪৮), উত্তর গোপালপুরের বাহার আলীর ছেলে মো. ইনছান আলী(২০), কোনাবাড়ী গ্রামের আ. ছামাদের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম(৪৮), নবগ্রামের মৃত মোছাবালী মুন্সীর ছেলে মো. আব্দুল মালেক(৬০), গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদরের পূর্বপাড়ার মৃত মফিজুল হকের ছেলে মো. শাহজাহান(৬২), টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কোনাবাড়ী গ্রামের মৃত আ. জব্বারের ছেলে নুর মোহাম্মদ(৬৪), বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মেছের আলীর ছেলে আব্দুল আলীম(৩২), লক্ষীপুরের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন(৬০), সোনামুই গ্রামের মৃত দুদু শেখের ছেলে মো. শিব্বির আহম্মেদ(৫৯), গাংগা পাড়ার মৃত সাদের আলীর ছেলে মো. বাদশা মিয়া(৫৪), হাজেরাবাড়ীর মৃত মুনসুব আলীর ছেলে ইউনুস আলী(৩৫), ভুটিয়া গ্রামের মৃত সরব উদ্দিনের ছেলে মো. আলাউদ্দিন(৫৫), জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের মৃত মনছের আলীর ছেলে মো. নজরুল ইসলাম(৪৫), টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মধুপুর ভট্ট গ্রামের মৃত জোবেদ আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফা(৪৫), বাখুরিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে আব্দুল জলিল(৬০), বেড়াডাকুরী গ্রামের মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে মো. আব্দুস সবুর(৭০), খানপাড়ার মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম(৪২), দক্ষিণ গোপালপুর চরপাড়ার মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মো. সোহাগ(১৯), চাতুটিয়ার আব্দুল আজিজের ছেলে মাসুদ করিম(৪০), মির্জাপুর উত্তরপাড়ার মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে মো. নাছির উদ্দিন(২৪), মধ্য মন্দিরা গ্রামের মো. সাহেব আলীর ছেলে মো. আশরাফ আলী(৪৪), ঝাওয়াইল গ্রামের মৃত পাচু মাহমুদ মুন্সীর ছেলে আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম(৭৭), ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা চরপাড়া গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে আব্দুল আলিম(৩২), গোপালপুর উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মো. ছানোয়ার হোসেন(২৭), পলশিয়া গ্রামের মৃত পাষান আলীর ছেলে মো. জুলহাস উদ্দিন(৫৬), কোনাবাড়ীর মো. হেকমত আলীর ছেলে মো. ফরমান আলী(২৮), একই এলাকার মৃত লাল মাহমুদের ছেলে মো. হেকমত আলী(২৮), জোতবাগল গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. বিজয় হোসেন মাসুদ(৩০), মোহনপুর গ্রামের মৃত শুক্কুর মাহমুদের ছেলে নাঈম খন্দকার(৪৪), কোনাবাড়ীর মৃত পাষান আলীর ছেলে মো. আশরাফ আলী(৬৭), জোতবাগল গ্রামের মো. নিজাম উদ্দিনের ছেলে মো. রাসেল রানা(২০) এবং সোনামুই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে ফরহাদ হোসেন(৩০)। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশের বাড়ি গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এবং অধিকাংশই শিক্ষকতা পেশায় জড়িত।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তারা দেশের সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর স্থাপনা বঙ্গবন্ধুসেতুতে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা বনভোজনের নামে সেতু এলাকায় একাধিকবার রেকি করেছে। এর আগেও তারা নৌকা ভ্রমনে গিয়ে সরকার উৎখাতে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করেছে এবং সরকার বিরোধী আপত্তিকর শ্লোগান দিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে তারা নাশকতার অংশ হিসেবে যমুনা নদীতে নৌকা ভ্রমনের নামে রেকি করার জন্য গোপালপুর উপজেলার নলীন বাজারে একত্রিত হয়। গোপনসূত্রে সংবাদ পেয়ে গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হেমনগর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৬জনকে আটক করে। তাদের হেমনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে আনা হয়।

তিনি আরো জানান, ১০ সেপ্টেম্বর(মঙ্গলবার) পবিত্র আশুরার অনুষ্ঠান ছিল। এদিন জেলায় নাশকতা হওয়ার আশঙ্কায় জেলা পুলিশ আগে থেকেই তৎপর ছিল। গ্রেপ্তারকৃত সহ ৫৯জন ও আরো অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের নামে গোপালপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫ডি ধারায় এসআই মালেক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করে ১৮জনের পাঁচদিনের রিমা- আবেদন করা হয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা ও স্কুলের শিক্ষকরা গোপালপুরের ঐতিহ্যবাহী ২০১ গম্বুজ মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক নুরুল ইসলামের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে নৌকা ভ্রমনে যাচ্ছিল। এর আগেও তারা নৌকা ভ্রমনে গিয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নিরীহ শিক্ষকদেরকেও ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ও মামলায় আসামি করেছে।

(আরকেপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯)