সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের সাজিউড়া গ্রামে অবস্থিত তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী প্রয়াত নলিনী রঞ্জন সরকারের কোটি টাকা মূল্যের পৈতৃক বাড়িটি। ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি সরকারের নানা অবহেলা ও অযত্নের কারনে অস্থাবর সম্পত্তি তছরুপ হয়ে আজ ধংসের পথে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি এই বাড়িটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী মদন উপজেলার হাসনপুর গ্রামের মৃত টিকেন্দ্র সরকারের ছেলে দিলীপ সরকার ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িটির অস্থাবর সম্পত্তি (ঘর, গাছপালা) বিক্রি করে তছরুপ করে আসছেন। সাজিউড়া সাগুলী গ্রাম সহ এলাকাবাসী ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে কিছুদিন আগে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তাদের দাবী, এই বাড়িটির কাচরী, মন্দির ও বসতঘর সহ প্রায় ২৮টি ঘর ছিল।

বসতঘর, কাচারীঘর ও মন্দির ছাড়া এই বাড়ির সব ঘর কালো বাজারে বিক্রি করে আত্মসাত করে আসছে দিলীপ সরকার। দিলীপ সরকার নিজেকে নলিনী রঞ্জন সরকারের ভাগ্নের দিকে নাতি বলে দাবী করেন। এ বিষয়ে সাজিউড়া গ্রামের দেবমন্দির কমিটির সভাপতি নিতাই বিশ্বাস ও সাধারন সম্পাদক চপল সরকার জানান, নলিনী রঞ্জন সরকারের কোন বোনই ছিল না। বোন না থাকলে ভাগ্নে ভাগ্নী কিভাবে হয় তা আমাদের জানা নেই। আমরা এই বাড়িটির ঐতিহ্য রক্ষার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানাই।

ওই গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার বিজয় বিশ্বাস ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি রহিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, একটি বিশেষ মহলের যোগসাজসে এই বাড়িটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী দিলীপ সরকার প্রায় কোটি টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পত্তি ও মূল্যবান গাছপালা বিক্রি করে সমুদয় টাকা তছরুপ করেছে। তারা বলেন, গত কয়েক বছর আগে চিরাং ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।

ওই মামলায় দিলীপ সরকার কয়েক মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পায়। পরে অদৃশ্য কারনে মামলার প্রক্রিয়াটি থেমে যায়। গত কয়েকদিন আগে এলাকাবাসীর ও দিলীপ সরকারের একটি অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করেন কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ও কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। এলাকার নতুন প্রজন্মের দাবী ওই বাড়িটিতে নলিনী রঞ্জন সরকার নামে একটি পার্ক করার। এতে সামাজিক পরিবেশও সুন্দর হবে, সেই সঙ্গে সরকারেরও মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হবে। সম্প্রতি নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি অসীম কুমার উকিল ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িটির অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলামকে পরামর্শ দেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোছাঃ শিরিন সুলতানা বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে বিস্তাড়িত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আমাকে চিঠি দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়িই এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করব। চিরাং ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম জরিপ বলেন, আমার কাছ থেকে ওয়ারিশান সনদপত্র নিতে এসেছিলেন দিলীপ সরকার কিন্তু সত্যিকার ওয়ারিশান না হওয়ায় আমি তাকে সনদপত্র দেইনি। এ ব্যাপারে দিলীপ সরকারের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯)