আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ২০০৩ সালে হরতাল ও অবরোধের সময় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদশর্কের (এএসআই) মঈন উদ্দিন মাতুব্বরের বিধবা স্ত্রী রাশিদা বেগমকে থানার মধ্যে বসে উজিরপুর মডেল থানার ওসি এবং প্রকাশ্যে জনসম্মুখে এক পুলিশ কনস্টেবল মারধর করে গালে সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে ঝলসে দেয়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নজরে এসেছে।

বহুল আলোচিত উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পাল এবং পুলিশ সদস্য জাহিদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে এখনও অভিযুক্ত ওসি ও কনস্টেবল থানায় বহাল তবিয়তে থাকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার সকালে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিএম তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর হককে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন (বাকেরগঞ্জ) ও জেলা পুলিশের ইন্সপেক্টর (প্রশিক্ষক) মাসুম বিশ্বাসকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, অতিগোপনে শুক্রবার দিনভর তদন্ত কমিটির প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়েছেন। শনিবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) নাইমুর হক সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছেনা।

হামলায় আহত রাশিদা বেগমের ছেলে বাবু ওরফে আল-আমিন শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, তার মাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ওসি এবং কনস্টেবলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও জানান, হামলার ঘটনার পর তার মায়ের সাক্ষাতকারের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর পরপরই হামলাকারী ওসি শিশির কুমার তাকেসহ (আল-আমিন) ও তার মা রাশিদা বেগমকে থানায় আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যার স্বীকারোক্তি নিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে রাখে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যার ওসি এবং কনস্টেবলের হামলার পরপরই নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা রাশিদা বেগম থানা সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পরেন। স্থানীয়রা তার কান্নাজড়িত সাক্ষাতকারের ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। মুহুর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

এর আগে গত চারদিন আগে উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের সাবেক (এএসআই)’র বিধবা স্ত্রী রাশিদা বেগম (৬২)। ডিআইজির কাছে অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রাশিদা বেগমকে প্রথমে পুলিশ কনস্টেবল জাহিদ থানার সামনের একটি চায়ের দোকানে বসে মারধর করে তার গালে সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে ঝলসে দেয়। তাৎক্ষনিক ওই নারী ওসি শিশির কুমার পালের রুমে গিয়ে বিষয়টি জানালে সে (ওসি) নিজ হাতে রাশিদা বেগমকে মারধর করে থানা থেকে বের করে দেয়।

বৃদ্ধ রাশিদা বেগম মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদশর্ক (এএসআই) মৃত মঈন উদ্দিন মাতুব্বরের স্ত্রী। বরিশাল শহরে কর্মসংস্থানের সুবাধে তিনি (রাশিদা) উজিরপুরের ইচলাদী এলাকার ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আবুল কালামের ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

গত ১৩ আগস্ট ওই বাসা থেকে রাশিদার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায় ইচলাদী গ্রামের চিহ্নিত বখাটে যুবকেরা। এ ঘটনার পরেরদিন (১৪ আগস্ট) রাশিদা বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়েরের জন্য লিখিত অভিযোগ জমা দিলেও ওসি শিশির কুমার পাল মামলা না নিয়ে গত ১৯ আগস্ট অপহৃতাকে উদ্ধার করে রাশিদাকে থানায় ডেকে নিয়ে মেয়েকে বুঝিয়ে দেন। থানা থেকে বের হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে অপহরনকারী পুর্নরায় রাশিদার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য তিনবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও ওসি শিশির কুমার পাল রাশিদার সামনে বসেই তিনবার অভিযোগপত্র ছিড়ে ফেলেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে রাশিদা বেগম বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজির সাথে সাক্ষাত করে তার কাছে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন এবং ওসি শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক রেঞ্জ ডিআইজি উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমারকে রাশিদা বেগমকে আইনী সহায়তা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হন ওসি শিশির কুমার পাল।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত রির্পোট পাওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯)