অমল তালুকদার, বরগুনা : ষোল বছরের মেয়েকে সংসারের  টানাপোড়েনের কারণে মামার বাড়িতে দেখাশুনার জন্য রেখে যান মা-বাবা। দীর্ঘদিন একই ঘরে থাকার কারণে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পকের্র এক পর্যায় শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিশোরীটি  অন্তঃসত্ত্বা হয়। মামাতো ভাই সোলায়মানের চাকরি হলে তিনি ট্রেনিংয়ে চলে যান। পরিবর্তন হতে শুরু করে ফুপাতো বোনের শরীর, চেহারা।

অন্তঃসত্বার খবর গোপন রেখেই ১৫ জুলাই কালমেঘা ইউনিয়নের লাল মিয়ার ছেলে মাজহার উদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জহির উদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ওই কিশোরীর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন কাকচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু। কোরবানি ঈদের একদিন আগে স্বামী জহির স্ত্রীকে বাড়িতে তুলে নেয়। জহির জানতেন না তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। বাসর ঘরেই প্রকাশ পায় নববধূ অন্তঃসত্ত্বা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার শিংড়াবুনিয়া গ্রামের ওই কিশোরীর মা-বাবা ঢাকায় কাজ করতেন। ১৬ বছরের মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে ১০ মাস আগে আপন ভাইয়ের বাড়িতে রেখে যান তাকে। ঘটনাটি চেপে রেখেই অভিভাবকরা কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টুর উপস্থিতিতে ইউপি কার্যালয়ে জহিরের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে দেয়া হয়। বাসর ঘরে টের পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বামী জহির। বিষয়টি জহির তার ভাবিকে জানালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় ভাবী। ডাক্তারী পরীক্ষায় প্রমাণ মিলে সে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিশোরীটি ৩২ সপ্তাহ'র অন্তঃসত্ত্বা বলে নিশ্চিত হন তারা । চলতি বছরের নভেম্বরের ৬ তারিখ সম্ভাব্য ডেলিভারি তারিখ তার।

বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। গত শুক্রবার বিকালে কিশোরীর মা পাথরঘাটা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার আপন ভাই, ভাইয়ের ছেলে ও ভাইয়ের বউকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা দায়ের করে।

জহির উদ্দিন বলেন, আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেয়ের অভিভাবকরা। আমি এর বিচার চাই।

জহির উদ্দিনের ভাই আল-আমিন বলেন, কাকচিড়ার চেয়ারম্যান পল্টু স্থানীয় কাজীকে ডেকে এনে বিয়ে পড়ান এবং কাবিন রেজিস্ট্রি করিয়ে দেন।

এদিকে শুক্রবার আবুল কালামকে পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে প্রেরণ করা হলে তাকে জেল হাজতে পাঠান বিচারক। অভিযুক্ত মামাতো ভাই সোলায়মানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

অভিযুক্ত কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। আমার কার্যালয়ে এমন কোন বিয়ে হয়নি।

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ওই কিশোরীর মামাতো ভাই সোলায়মান ও তার বাবা-মাকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে বাবা কালামকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯)