লালপুর(নাটোর)প্রতিনিধি : নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের  টিকিট কাটা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে জামাত আলী জুম্মত (৩৫) ও জীবন আলী (১৬) নামে দু’জন নিহত হয়। এ সময় অন্তত ১২ জন আহত হয়।

দু’দফায় প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষের সময় রেল স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

স্থানীয়রা জানায়, টিকিট কাটা নিয়ে স্থানীয় কালোবাজারিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা হয়। তবে রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলি বর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে। এদিকে ঘটনার পর রাজশাহীতে অবস্থানরত রেলওয়ে সচিব আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম আব্দুল আওয়ালসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে ঈশ্বরদী বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাটা নিয়ে লালপুর উপজেলার ডহরশৈলা গ্রামের লোকদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মোবাড়ি শৈলপাড়া গ্রামবাসীর মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা হয়। পরে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। দু’দফায় প্রায় ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় দু’পক্ষই রেল লাইনের পাথর সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এ সময় রেল স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাটোরের লালপুর উপজেলার ডহরশৈলা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে জামাত আলী জুম্মত (৩৫) ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

সংঘর্ষে আহত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা মোবাড়ি শৈলপাড়া গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র জীবনকে (১৬) ঈশ্বরদীর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়ার পর মারা যায়। আহত আমজাদ, রানা, মামুন ও মোতালেবসহ অন্যদের হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে জীবন আলীর লাশ ঈশ্বরদী থানা এবং জামাতের লাশ লালপুর থানা ময়না তদন্তের জন্য নাটোর মর্গে প্রেরন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবারের মত এবারের ঈদ মৌসুমেও ডহরশৈলা ও মোবাড়ি শৈলপাড়া গ্রামের টিকিট কালোবাজারিরা সক্রিয় হয়। কালোবাজারে বিক্রির জন্য শুক্রবার সকালে আগাম টিকিট কাটার লাইন ধরা নিয়ে ওই দুই গ্রামের কালোবাজারিদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পড়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঈশ্বরদী বাইপাস রেলওয়ে স্টেশনে চোরাচালানি সহ কালোবাজারি নিয়ন্ত্রনে এই দু’টি গ্রামের কালোবাজারিরা চক্র স্টেশন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। নিরাপত্তা রক্ষীদের মাসোহারা দিয়ে দির্ঘদিন ধরে তারা এসব অপকর্ম করে আসছে।

এদিকে ঘটনার অনেক পরে রেলওয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা রেল কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এসময় ৫ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে ঈশ্বরদী ও লালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার ওসি হুমায়ন কবির জানান, টিকিট কাটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়। নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলি বর্ষণের কথা সঠিক নয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
লালপুর থানার ওসি তালুকদার আব্দুল হাই জানান, উভয় গ্রুপই কালোবাজারি কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

(এমআর/জেএ/আগস্ট ০১, ২০১৪)