আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জাতীয় পার্টির নেতার বিরুদ্ধে গৃহবধূ অপহরণের পর শিশু সন্তানকে জিম্মি করে ধর্ষণ ও মুক্তিপনের অভিযোগে ভুক্তভোগী গৃহবধূর মামলা দায়ের। 

উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ভালুকশী গ্রামের অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হওয়া এক সন্তানের জননী (২৭) বাদী হয়ে রাজিহার ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও একই গ্রামের কাজী আব্দুর রহমানের ছেলে কাজী এনামুলকে আসামী করে রবিবার (১৫সেপ্টেম্বর) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন। কাজী এনামুল রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলেন।

ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক আবু শামীম আজাদ মামলাটি আগৈলঝাড়া থানার ওসি’কে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।

আদালতে দায়ের করা গৃহবধুর অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, ওই গৃহবধুর স্বামী চট্টগ্রামে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাদে সেখানেই বসবাস করছিলেন। স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে জাপা নেতা এনামুল গৃহবধুকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এনামুলের কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এনামুল গৃহবধুর সাড়ে ছয় বছরের শিশু সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। সন্তান হত্যার হুমকী ও নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গৃহবধু তার স্বামীর কাছে চট্টগ্রাম চলে যায়। চট্টগ্রাম সিএ্যান্ডবি কালুরঘাট এলাকায় স্বামীর সাথে বসবাস করা অবস্থায় গত ২২ জুলাই রাতে গৃহবধুকে অজ্ঞান করে তার শিশু সন্তানসহ অপহরণ করে কাজী এনামুল।

অপহরণের পর ওই গৃহবধুকে সাভারের একটি বাসায় ৪১ দিন আটক রেখে তার শিশু সন্তানকে জিম্মি করে দিনের পর দিন গৃহবধুকে ধর্ষণ করে এনামুল। এই সময়ের মধ্যে গৃহবধুকে মুক্তি দিতে ৮লাখ টাকা দাবী করে অপহরনকারী এনামুল। মুক্তিপনের কথা গৃহবধু তার ভাইকে জানালে গত ২ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধুর ভাই এনামুলকে ৭ লাখ ৫০হাজার টাকা দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

মুক্তিপনের টাকা পেয়ে অপহরক এনামুল ৩ সেপ্টেম্বর গৃহবধু ও তার সন্তানকে অজ্ঞান অবস্থায় আগৈলঝাড়া-ঢাকা সড়কের আগৈলঝাড়া বাইপাস ব্রিজের পশ্চিম পাশে পাশে ফেলে রেখে যায়। উদ্ধার হওয়া ওই গৃহবধু ঘটনার বর্ননা দিয়ে নিজে বাদী হয়ে রবিবার কাজী এনামুল এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বাদীর স্বামী জানান, অপহরণের পর তার সাথে ফোনেও আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি তার স্ত্রী। উদ্ধার হবার দুই দিন আগে তার শ্যালককে মুক্তিপনের টাকার জন্য তার স্ত্রী ফোন দিয়েছিলো। স্ত্রী নিখোঁজের ঘটনায় চট্টগ্রামের চানগাঁও থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন দাবি করলেও তার কোন প্রমান তিনি দেখাতে পারেন নি নির্যাতিতার স্বামী।

অভিযুক্ত কাজী এনামুল ফোনে বলেন, সম্পূর্ন ঘটনা মিথ্যা ও সাজানো জানিয়ে আরও বলেন, মামলার বাদীর উপস্থিতিতে তার স্বামী দেড় বছর আগে তার (এনামুলের) কাছে ১১লাখ টাকায় জমি বিক্রি করার জন্য স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ১১হাজার টাকা নেয়। পরবর্তিতে ওই জমি আর বিক্রি করবেনা জানালে এনামুল তার টাকা ফেরত চাইলে বাদীর স্বামী এনামুলকে টাকা আনতে কোন এক শুক্রবার ওই ষ্ট্যাম্প নিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে বলে। এনামুল সেখানে গেলে ব্যাংক বন্ধর কারণ দেখিয়ে এনামুলকে ওই গ্রহবধু নিজের নামে আগৈলঝাড়া সোনালী ব্যাংক শাখার এ্যাকাউন্টের ৫ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করলে এনামুল ওই ষ্ঠাম্প ফেরত দিয়ে দেয়।

পরে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারে তার হিসাব নম্বরে জমা ছিল ৩১শ টাকা। চেক ডিজঅনার হওয়ায় এনামুল তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর চেক জাঁলিয়াতির মামলা দায়ের করেন, নং-৬৭৬/১৯। ওই মামলায় অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার বাদী গ্রেফতার হয়। জামিনে বেড়িয়ে প্রতারণা মামলা থেকে বাঁচতে বাদী তার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন জানান, আদালতে দায়ের করা এরকম কোন মামলা তিনি মঙ্গলবার মেষ বিকেল পর্যন্তও হাতে পাননি। মামলার কপি পেলে আদালতের নির্দেশিত কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯)