নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানি তোলার মোটর চুরির অপবাদ দিয়ে রকি মোল্যা (৩১) নামে এক শ্রমিককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী  অচেতন অবস্থায় আহত রকিকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। 

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার রকির ভাই ফারুক মোল্যা বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে দিনভর এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

রকির মা ও এলাকাবাসি সুত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে উপজেলার কাশিপুর ইউপির চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানি তোলার একটি মোটর চুরি হয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী পার্শ্ববর্তী কলাগাছি গ্রামের আতিয়ার মোল্যার ছেলে রকি মোল্যা ও চালিঘাট গ্রামের হাফিজার শেখের ছেলে রসুল শেখকে চোর হিসেবে সন্দেহ করে। এরপর কাশিপুর ইউপির সাবেক মেম্বর শরীফুল শেখের নেতৃত্বে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহসীন আলমসহ ৪/৫ জন মিলে গত মঙ্গলবার সকালে লক্ষীপাশা এলাকা থেকে শ্রমিক রকিকে জোর পূর্বক মোটরসাইকেলে করে তুলে চালিঘাট এলাকার একটি ব্রিজের পাশে নিয়ে মারধোর করে। পরে সেখান থেকে রকিকে চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে নিয়ে হাত-পা বেঁধে দ্বিতীয় দফায় লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রকি সাংবাদিকদের জানান, নির্যাতনের সময় তার কাছ থেকে নির্যাতনকারীরা নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে অচেতন হয়ে পড়ি। খবর পেয়ে আমার মা ফিরোজা বেগম সন্ধ্যার দিকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্টু বিচার চাই।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ওই রোগীর মাথা, বুক ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে শংকামুক্ত নয়।

এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে নির্যাতনের শিকার রকির ভাই ফারুক মোল্যা বাদী হয়ে ৭জনের নাম উল্লেখ করে লোহাগড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

চালিঘাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন বলেন, ঘটনার সময় আমি স্কুলে ছিলাম না। পরে স্কুলে এসে আহত রকিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোকাররম হোসেন এজাহার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯)