স্টাফ রিপোর্টার : দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দুই বছরের শিশুও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না জানিয়ে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নারী নির্যাতনের খবর প্রকাশ করায় সংবাদ মাধ্যমের ভূয়সী প্রশংসা করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, একটি নারী বা শিশুও নির্যাতিত হোক, সেটি কারও কাম্য নয়। মিডিয়া এ বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে। এজন্য মানুষ আগের চেয়ে বেশি নির্যাতনের কথা জানতে পারছে।

সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৬ষ্ঠ বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বৈঠকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, নারী ও শিশুর সুরক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণসহ সব অস্থিরতার বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং কমিউনিটি লিডারদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক কাজ করতে হবে। প্রচারণা জোরদার করতে হবে।

এ সময় কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি লুৎফুন নেসা খান বলেন, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েই চলছে, যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দুই বছরের শিশুও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। প্রতি মহল্লায় কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে। তারা চুরি, খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বড় বড় মাস্তান এবং সন্ত্রাসী এদের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রা ও মাদক সেবনকারীদের নিজেদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নানা অপরাধ ঘটিয়ে চলছে। এসব প্রতিকারে এবং সামাজিক সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সরকারের অনেক কর্মসূচি রয়েছে। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন কমিটি রয়েছে। কিন্তু তারপরও তা বন্ধ নেই। তিনি এর প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে কমিটিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, নারী নির্যাতন ও কিশোর অপরাধের মূল কারণ সম্পর্কে অনেক গবেষণা করা দরকার। শিশুদের জন্য আলাদা অধিদফতর এবং বাজেটে বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

সরকারি দলের এমপি এএম নাঈমুর রহমান বলেন, নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় অত্যন্ত ভালো ভালো কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচির বিষয়ে মানুষকে অবহিত করার জন্য প্রচারণার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে সেন্টার ফর রিসার্চের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। তাহলে মানুষ এসব প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে পারবে।

আওয়ামী লীগের আরেক এমপি মো. আব্দুল আজিজ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের যেসব সংবাদ প্রতিদিন সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ধর্ষককে সমাজে ঘৃণা করার পথ তৈরি করতে হবে। একজন ধর্ষককে মিডিয়ায় দেখানো হলে সে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হবে। কিন্তু এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মাদকের নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। স্কুলের ছাত্ররা পর্যন্ত মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। এর সাথে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন জড়িত থাকায় তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় উদ্যোগ নিয়েও মাদক নিয়ন্ত্রণে শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের আওতায় কোনো কোনো জেলায় অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আবার তার জেলাসহ কোনো কোনো জেলায় এ ধরনের কোনো প্রকল্পই নেই। তিনি দেশের সব জেলায় সমতার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান।

কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি জানান, জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে গঠিত এ সংক্রান্ত একটি উপকমিটি প্রতিটি জেলায় গণশুনানির আয়োজন করবে। উপকমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বিষয়গুলো আলোচনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিশুদের সুরক্ষার প্রতি অবশ্যই অভিভাবকদের অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় নারীদের সচলতা বৃদ্ধি, কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিকতার ছোঁয়া, তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও ব্যবহার ইত্যাদি কারণে কিছু সমস্যা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব আলোচনার পর সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে স্থানীয় প্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কার্যকর সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯)