সাতক্ষীরা থেকে, রঘুনাথ খান : ‘ওরে আমার সিমাই চিনির দরকার নেই। ঈদ করে আর কি হবে। সিমাই চিনি দিয়ে কি আমি আমার বিপ্লবকে ফিরে পাব। যেসব পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা আমার বিপ্লবকে হাত পা ভেঙে, মাথায় বাড়ি মেরে উরুতে গুলি করে চিকিৎসা করতে না দিয়ে হত্যা করেছে তাদের বিচার কবে হবে ? সারা জীবনে বিপ্লবের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে তার মধ্যে তিনটি খালাস হয়ে গেছে। অথচ ডিবি পুলিশ সাংবাদিকদের কাছে এক ডজন মামলার ফিরিস্ত ধরিয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করে জনগনের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে চেষ্টা করেছে সেই ডিবি পুলিশের কিছু হবে না! ২৬ মে বাড়িতে ডিবি পুলিশের অভিযান নিয়ে এসপি’র কাছে গেলে তিনি যেভাবে চেয়ারম্যান লিটু, ছেলে জাহাঙ্গীর ও আমাকে অপমান করেছিলেন তাতে বিপ্লবকে ধরার জন্য কার নির্দেশনা ছিল তা তার জানতে বাকি নেই। দেখি কবে আল্লাহ কবে ওদের বিচার করে। ওরে করিম তুই জামাই জাফরকে বলে দিস চাচী তোমার পাঠানো সিমাইও ফিরিয়ে দিয়েছে।’

মঙ্গলবার সকালে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দোহার গ্রামে গেলে বিএনপি নেতা বিপ্লব শেখের মা হালিমা বেগম বলেন, গত ১৭ জুলাই মাঝরাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসাী মোকছেদ শেখের পাঁচ ছেলেসহ আনারুল, মিণ্টুরা যেভাবে ছবেদ মোড়লকে বাম হাতে গুলি করে, তার স্ত্রী রিজিয়া, আশরাফুল, নূর ইসলাম, অবেদ আলীসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে বিপ্লবকে মারতে মারতে পরে ডান পায়ের উরুতে গুলি করে সদর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করেছে তা কোন সভ্য দেশে হতে পারে না। আমার ছেলে অন্যায় করলে প্রচলিত আইনে বিচার হোক। তা না করে কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্করের মত আমার ছেলেকে পুলিশ ও প্রতিপক্ষ সন্ত্রসাীরা গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ যেন তেন প্রকারে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে মৃত্যুকালিন জবানবন্দিতে তার হাত পা ভেঙে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেনি। ডিবি পুলিশ জাফর মোড়লকে গুলি করে সন্ত্রাসীদের সহায়তায় ধরে নিয়ে বিপ্লবকে গুলি করলেও প্রেসনোটে তাদের উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। যদিও তালা থানার উপপরিদর্শক আকরাম হোসেনের দায়েরকৃত মামলায় ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে সাক্ষী করায় প্রেসনোটের মিথ্যাচারের জালে তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছে। শাহীন ও তোজাম নতুন দা তৈরি করে বেশি বাড়াবাড়ি করলে জাহাঙ্গীরের ভাগ্যে বিপ্লবের পরিণতি ঘটবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সন্ত্রাসীদের দোসর হওয়ায় তারা উৎসাহিত হচ্ছে। সন্তানদের এতবড় যন্ত্রণা নিয়ে কি ঈদ করা যায়? বল না তোমরা বাবা! আমার বিপ্লব যে একটি দিনের জন্য আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল তাকে এভাবেই মরতে হলো। দেশে কি আইন বলে কিছু নেই। ওয়ার্কার্স পার্টির এক স্থানীয় নেতা আগামি ইউপি নির্বাচনে জনপ্রিয় বিপ্লবের কাছে নিশ্চিত পরাজয় জানতে পেরে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কয়েকবার গোপন বৈঠক করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি তার ছেলে বিপ্লবকে হত্যার পর ছাত্র ও কলেজ শিক্ষকরা নীরব থাকায় তাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন।

তিনি বজ্র কণ্ঠে বলে ওঠেন, পুলিশ সাংবাদিকদের প্রেসনোটে বিপ্লবের বিরুদ্ধে যে একডজন মামলার কথা উল্লেখ করেছে তার মধ্যে ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি তালা থানায় দায়েরকৃত ১৩নং মামলা, ২০১২ সালের ৬ জুন ০৬ নং মামলা বিচারাধীন ছিল। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১৭ মে প্রতিপক্ষ মামুদুল শেখের দায়েরকৃত ১২নং মামলা, একই সালের ২২ জানুয়ারি মোজাম শেখের দায়েরকৃত ১৩নং মামলা ও ২০০৮ সালের ১৯ অক্টোবর মোজাম শেখের দায়েরকৃত ৯নং মামলা খারিজ হয়ে গেছে। এর বাইরে বিপ্লবের নামে কোন মামলা ছিল তা পুলিশকে প্রমান করতে হবে। এরপর তিনি বলেন, বিচারের জন্য যেখানে যেখানে যেতে হয় সেখানে যাবেন তিনি। সেজন্য মৃত্যুকে ও পরোয়া করবেন না তিনি। একথা বলতে বলতে মুর্ছা যান তিনি। এরপর পরই ছেলে জাহাঙ্গীর ও মেয়ে নার্গিস মায়ের মাথায় পানি ঢালতে থাকেন। ঈদের দিনে এ নিরানন্দ দেখতে না পেরে সাংবাদিকসহ প্রতিবেশিরা স্থান ত্যাগ করেন।

(আরকে/অ/আগস্ট ০১, ২০১৪)