বিশেষ প্রতিনিধি : চলমান অভিযান প্রমান করে দেশের সকল স্তরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।

তারা বলেন, বালিশ-চেয়ার-টিন-বই-পর্দা দুর্নীতি সহ সকল স্তরের দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, দুর্নীতি আজ মহামারীতৈ পরিনত হয়েছে। এই দুর্নীতির ফলে সকল প্রতিষ্ঠানে পচন ধরেছে। সরকারের উন্নয়ন আজ লুটপাটের উন্নয়নের পরিনত হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করছে।

বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এসব কথা বলেন।

নেতৃদ্বয় বলেন, দেশের মানুষ মাত্র কয়েক দিন আগে আকস্মিকভাবে জানতে পারল যে, ঢাকা শহরে বহুদিন ধরে উন্নত পুঁজিবাদী পশ্চিমা দেশের কায়দায় ‘ক্যাসিনোর’ মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জুয়ার ব্যবসা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা শহরকে সিঙ্গাপুরের মতো শহরে পরিণত করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা যে এত দ্রুত এবং সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল জুয়ার ব্যবসার ক্ষেত্রে এভাবে কার্যকর হবে, সে কথা সাধারণ মানুষের ধারণার একেবারে বাইরে ছিল। খোদ শাসক দলের কিছু নেতাও যে এর সঙ্গে যুক্ত, সে কথাও প্রকাশিত হয়েছে।

তারা বলেন, দেশে অভূতপূর্ব ‘উন্নয়নের’ কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান সরকারের আমলে এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৮ বছর পর মদ-জুয়াসহ নিকৃষ্টতম আরও অনেক ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড- সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলতে উদ্ধত হয়েছে। এমন যে হতে পারে তা দেশবাসীর কল্পনাতেও ছিল না। এসব দেখে মনে হচ্ছে, পরাজয় গ্লানিকর, কিন্তু বিজয় লাভ করার পর সে বিজয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার গ্লানি ও বেদনার কোনো সীমা নেই।

ন্যাপ নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি-কমিশন ব্যবসা ইত্যাদি এখন অর্থনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতার স্বাভাবিক অংশে পরিণত হয়েছে। ‘ক্যাসিনো’কান্ডের মাত্র দিনকয়েক আগে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মাধ্যমে ঠিকাদারের কাছ থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার ‘সেনসেশনাল’ ঘটনা সব মহলের মাঝে প্রবল ধিক্কার ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। সেই অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল তাদের দুজনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হলেও তাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি।

তারা বলেন, সমাজ-অর্থনীতির পচন আজ সর্বত্র বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। লুটপাট যে এ দেশে আজ কতটা বিস্তৃত ও ভয়ঙ্কর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে তার ভীতিপ্রদ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে সম্প্রতি প্রকাশ হয়ে পড়া বিভিন্ন ঘটনায়। এ অবস্থা নতুনও যেমন নয়, হঠাৎ করেও তার উদ্ভব ঘটেনি। বস্তুত সরকার পরিবর্তন হয়, ক্ষমতার হাতবদল হয় কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতি অনাচার-দুরাচারের অবসান ঘটে না। বরং তার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে পেতে আজ ক্যান্সারে পরিনত হয়েছে। এই ক্যান্সার নিরাময় করতে না পারলে এহেন ক্রমবর্ধমান পচন থেকে সমাজকে রক্ষা করার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শোষণমুক্ত সমঅধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার বদলে প্রায় চার যুগ ধরে তার বিপরীত ধারায় দেশ পরিচালিত হয়েছে। জনগণের স্বপ্নভঙ্গ ও হতাশার সুযোগ নিয়ে দেশে দুর্নীতি আর লুন্ঠনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতার সমীকরণ মেলানোর প্রয়োজনে শাসক দলগুলো দুর্নীতি আর লুটেরা শক্তির মদদ পেতে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। দেশ আজ এই মহাবিপদের সম্মুখীন।

নেতৃদ্বয় বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-অনাচারবিরোধী চলমান অভিযান কতদিন ও কতদূর পর্যন্ত চলে, তা দেখতে হবে। ’১৯৭৪ সালেও বঙ্গবন্ধু অনাচারের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করেছিলেন, কিন্তু দলের ভেতর থেকে সেটির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ ওঠায় অল্পদিন পরেই তিনি তা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। চলমান অভিযানের ‘শক্ত হাত’ শেষ পর্যন্ত ‘লুটপাটের ব্যবস্থা’ অপসারণে পদক্ষেপ পর্যন্ত পৌঁছায় কিনা সেটিও দেখতে হবে। এসব না দেখে এই অভিযান সম্পর্কে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবে মানুষ চায় যে এই অভিযান সঠিক পথে ও শক্তভাবে অগ্রসর হোক এবং সরকার প্রধান সফল হোক।

(এম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯)