স্টাফ রিপোর্টার : দুই বছরের মাথায় একই প্রক্রিয়ায় আলকাছ মিয়াকে শুক্কুর আলী বানিয়ে ভুয়া মালিক সাজিয়ে অন্য ব্যক্তির কৃষি জমি বিক্রির জন্য বায়না করতে গিয়ে আবারো জালিয়াতির জালে মৌলভীবাজারের সেই আলোচিত ভুমি জালিয়াত চক্রের হোতা মেহের আলী। 

গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে মৌলভীবাজার শহরের জেলা সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। জানা যায় সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার ৪নং ব্রীজের বিপরীতে অবস্থিত একই উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হামিদ মিয়ার প্রায় ৩৬ শতক ভুমি রয়েছে, যেখানে জগন্নাথপুর গ্রামের রাজা মিয়া নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত বুরো ও আমন চাষ করে আসছেন।

জানা যায়, ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে মেহের আলী জেলা সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে। পরে সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় মেহের আলী খলিলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হামিদ মিয়ার ৩৬ শতক ভুমির মালিক হিসেবে জগন্নাথপুর গ্রামের মেহের আলীর আত্মীয় আলকাছ মিয়া (৭০) কে শুক্কুুর আলী নাম দিয়ে ভুয়া মালিক সাজিয়ে এবং তার ছেলে পরিচয়ে একই গ্রামের মৃত আকবর মিয়ার ছেলে রহিম মিয়াকে আলকাছ মিয়া ওরফে শুকুর আলীর ছেলে পরিচয় দিয়ে জায়গা বিক্রির বায়না পত্রে স্বাক্ষর ও বায়না বাবত নগদ দুইলক্ষ টাকার জন্য সাব রেজিষ্টার কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জায়গার ক্রেতা পক্ষের লোকজনের বিষয়টি সন্ধেহ হলে জায়গার মালিক পরিচয় দেয়া আলকাছ মিয়া ওরফে শুক্কুর আলীর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে চান তার ছেলে পরিচয় দেয়া মেহের আলীর সহযোগী আরেক প্রতারক রহিম মিয়ার কাছে ।

এসময় রহিম মিয়া জানায় তার বাবা গুরুতর আসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন , আগামী সাপ্তাহে জায়গার রেজিষ্টারী সম্পন্ন হবে, আজ শুধু দুইলক্ষ টাকা বায়না দিয়ে বায়নাপত্রে স্বাক্ষর করে টাকা নিয়ে যেতে বলেছেন তার বাবা।

এসময় জায়গার মূল মালিক হামিদ মিয়া উপস্থিত হলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় শুক্কুর আলীর ছেলে পরিচয় দেয়া রহিম মিয়া। নিজের জায়গা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্য সম্পর্কে মেহের আলীর কাছে জানতে চাইলে মেহের আলী জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে জায়গার মালিক পক্ষ নিয়ে যান ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে । এর আগে জালিয়াতি চক্রের অভিযুক্ত অন্য দুই প্রতারক আলকাছ মিয়া ওরফে শুকুর আলী পরিচয় দেয়া ও তাঁর ছেলে পরিচয় দেয়া মৃত আকবর মিয়ার ছেলে রহিম মিয়া পালিয়ে যায়।

জানা যায় , ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলে মেহের আলীকে প্রথমে রশি দিয়ে বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সেখানেও সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেয়। পরে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ-ঘটনায় গত দুদিন যাবত গোটা এলাকায় তোলপার শুরু হলেও বার বার মেহের আলীর এমন জঘন্য অপরাধের জন্য কোন আইনী ব্যবস্থা না নেয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ বার বার এমন জঘন্য অপরাধ করলেও কেন মেহের আলীকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছেনা? তারা জানান মূলত তার বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সে বার বার বড়বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়ে নিরাপদে পার পেয়ে যাচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে ভয়ঙ্কর সব জালিয়াতির তথ্য বেড়িয়ে আসবে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় শুক্কুর আলী নামের যে ব্যক্তি তার প্রকৃত নাম আলকাছ মিয়া। তিনি জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এবিষয়ে তার সম্পৃক্তার কথা অস্বীকার করলেও মেহের আলীর সাথে তার যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, আমার একটি মামলার বিষয়ে মেহের আলী সম্পৃক্ত, সেখানে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র তার কাছে থাকার কারনে তিনি পরিচয়পত্র জাল করে থাকতে পারেন। আর আমাকে শুক্কুর আলী বানানোর বিষযটি আমি লোকমুখে শুনেছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন তার এই অপরাধের জন্য এলাকার ভাবমুর্তী নষ্ট হচ্ছে তাই আমি এলাকার সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে এই চক্রটির বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেবো। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মেহের আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনের সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য: ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর মৌলভীবাজারের কুখ্যাত ভূমি প্রতারক মেহের আলী উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ এর স্বাক্ষও, সীল ও ইউনিয়নের প্যাড নকল করে ধরা পরার অপরাধে রাতভর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আটক হলে পরবর্তীতে তার ছোট ভাই আরাফাত আলীর জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ঐ সময় মৌলভীবাজারে তোলপার শুরু হয়।

জমি দখল, চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা,টাকার বিনিমিয়ে জাল কাবিন নামা, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও পরিচয় গোপন রেখে আদালতে মিথ্যা মামলা করাই মেহের আলীর মূল পেশা।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯)