গাইবান্ধা প্রতিনিধি : সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় ৩ উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পরিণত হয় সত্যিতে।  আড়াই বছর আগে সেতুটির উপর দিয়ে পারাপার শুরু হয়। কিন্তু বাপ-দাদার সময়ের দীর্ঘ ১০০ বছর আগের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। এমনটিই ঘটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-রামনগর বাজার সড়কে কাটাখালী নদীর ওপর ত্রিমোহনী সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে। সেতুর দক্ষিণে বিষপুকুর গ্রামে মাত্র ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। যানবাহন চলাচল না করায় সেতুর দু’পাশের এলাকায় শুধুই নীরবতা।

সরজমিনে সেতুর ওপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিষপুকুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সী আবদুল কাইয়ুম মিয়া জানান, ‘সামান্য এ্যাকন্যা রাস্তা তৈরির জন্যে হামরা কতই না দাবি জানালেম বাপো। চেষ্টার কতা কয় সগলাই, কামের কাম তো হয় না। রাস্তা বানানের জন্যে হামরা এলাকাবাসী নিজের আবাদের জায়গাও ছাড়ে দিচি, রাস্তা কোনটে হয়?’ এমন প্রশ্ন করেন ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন। সেতুর দক্ষিণে পাড় সোনাইডাঙ্গা গ্রামের দুলু মিয়া বলেন, এত কোটি টাকা দিয়ে ব্রিজ তৈরি করেও সামান্য রাস্তার জন্য মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না এলাকাবাসীর জন্য এটা একটা বড়ই দুঃখ।

এলাকার লোকজন জানান, একটি সেতুর অভাবে ৮ কিলোমিটার সড়কের স্থলে ৭০ কিলোমিটার ঘুরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে আসছিল তিন উপজেলার মানুষ। যে কারণে অন্তত ১০০ বছর আগে থেকে কাটাখালী নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কনস্ট্রাকশন অব লং ব্রিজ-১, উপজেলা অ্যান্ড ইউনিয়ন রোডস প্রজেক্টের (এলবিসি) আওতায় কাটাখালী নদীর উপর ৪০২৫ মিটার সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ২১শে অক্টোবর। ব্যয় হয় ২৪ কোটি ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬০ টাকা।

২০১৬ সালের ২৪শে মে সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কাজ পিছিয়ে যায়। পরে কাজ সম্পন্ন হলে ২০১৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। সাঘাটা উপজেলার সদর বোনারপাড়া থেকে সেতু পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও নতুন করে পাকাকরণ হলেও সেতুর ওপারে পশ্চিম অংশের বিষপুকুর গ্রামে মাত্র ৩০০ মিটার সড়ক নির্মাণের অভাবে গোবিন্দগঞ্জ সদরের সঙ্গে যোগাযোগ চালু হচ্ছে না।

এত ব্যয়বহুল সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না এলাকাবাসীর। বোনারপাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী জিয়াউল করিম বলেন, সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জে যাতায়াতে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা কমে আসবে। এ এলাকা থেকে মানুষ মাত্র ২৫ মিনিটে গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছবে। কিন্তু বাধা হয়ে রয়েছে সড়ক নির্মাণ। এ সড়ক দিয়ে খুব কষ্টে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে জানালেন, বোনারপাড়ার শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিকি।

এ ব্যাপারে কথা হলে সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম জানান, সাঘাটা অংশের সড়কের কোনো কাজ বাকি নেই। ওপাশের কাজের টেন্ডার হয়েছে শুনেছি।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, নদী ও নিচু এলাকা হওয়ায় কাজ দেরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম শেখের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯)