ফারদিন তাহরীম
জীবনের কঠিনতম অবস্থায়ও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, যদি কেউ জানে কিভাবে আলোটি জ্বালাতে হয়।‘-জে কে রাওলিং।

২৫ বছর বয়সে ‘হ্যারি পটার এন্ড দ্যা ফিলোসফারস স্টোন’ বইটি লেখার ৬ মাসের মাথায় মা মারা যায় জে কে রাওলিং এর! তার জীবনের অন্যতম কষ্ট হল মাকে তার বইয়ের কথা বলতে পারেন নি। ১৭ বছরবয়সে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয় রাওলিংকে। ২৭ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী তাকে অমানবিক নির্যাতন করত! এর-ই মাঝে তার একটি মেয়ে হয়।

২৮ বছর বয়সে ডিভোর্স! ৩০ বছর বয়সেতিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন! কিন্তু তখন-ই এসে যায় তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তিনি তার সন্তানের কথা ভাবার পাশাপাশি এইও ভাবেন, তার মাও জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেও কখনো হালো ছাড়েননি। মেয়ের কথা ভেবে তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার মেয়ে জেসিয়াকে নিয়ে ক্যাফেতে বসেই তিনি বইয়ের বাকি অংশের লেখা চালিয়ে যান।

রাওলিং অনেকদিন ধরে পান্ডলিপি নিয়ে প্রকাশকদের কাছে ঘুরছেন। কেউ তার অদ্ভুত বইটি ছাপাতে রাজি নন। দুইজন প্রকাশক, চারজন প্রকাশক এরকম করে একে একে সকলেই পান্ডুলিপি রিজেক্ট করেদেয়! এভাবে বারোজন প্রকাশক তার পান্ডুলিপি ফেরত দেন। দু-একজন পড়ে দেখেছেন, বাকিরা তো না পড়েই ‘রিজেক্টেড’ !

অবশেষে রাওলিং তেরোতম বারের মতো আবারো হতাশ হতে যান ” ব্লুমসবারি ” প্রকাশনায় । ব্লুমসবারি প্রকাশনার সম্পাদক ব্যারি কানিংহাম তো কঠিন সমস্যায় পড়ে গেলেন। কি করবেন এইকাহিনী নিয়ে!তিনি কোনো রকম আগ্রহ না দেখিয়ে পান্ডুলিপি চেয়ারম্যান নিগেল নিউটনকে দিয়ে দেন। নিগেল নিউটনেরও এতো সময় নেই। তিনি পাণ্ডুলিপি নিজে না পড়ে তার ৮ বছর বয়সী বই পোকা মেয়ে এলিসকে পড়তেদেন। এলিস পড়া কিছুক্ষণ গভীর কল্পনায় মগ্ন থাকে, তারপর তার বাবাকে পাগলের মতো জোর করতে থাকে যেন সে আজই বইটির বাকি অংশ ছাপিয়ে তাকে পড়তে দেয়। নিগেল নিউটনের আর বুঝতে দেরিহল না যে বড় কিছু হতে চলেছে!

অবশেষে বারোবারের মতো ব্যর্থ হবার পর ১৯৯৭ সালের ২৬শে জুন ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হয় রাওলিং এর বইটি। আমেরিকাতে টানা দু বছর বেস্টসেলার ছিল বইটি।আজ পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে বইটি প্রায় ৪৫কোটি কপি বিক্রি হয়। প্রকাশকদের অফিসে ঘুরতে থাকা রাওলিং হয়ে যান বিশ্বের সেরা নারী ধনীদের একজন!

হ্যারি পটারকে চিনে না এমন মানুষ পাওয়া বলতে গেলে অসম্ভব! আর এই হ্যারি পটারকে জন্ম নিতে করতে হয়েছিল কতই না সংগ্রাম!

ধরা যাক, রাওলিং প্রথম দুইজন প্রকাশক এর না শুনেই হাল ছেড়ে দিলেন! ভেবে দেখেন তাহলে কি হত! তিনি ধৈর্য ধরে বারোবার চেষ্টা করে গিয়েছিলেন! তেরোতম বারেও যদি ‘না’ শুনতে হত তবেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে যেতেন কারণ তার জানা ছিল ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! রাওলিং হাল ছেড়ে দিলে হয়তো আজ হ্যারি পটার থাকত না! হ্যারি পটার না থাকলে আমাদের শৈশবের আনন্দটাও থাকত না! তিনিজানতেন স্বপ্ন এতো সহজ কিছু নয়! স্বপ্ন যখন নিজে দেখেছি ; তা পূরণের দায়িত্বও নিজেরই! রাওলিংয়ের পুরো জীবনটাই কেটেছিল দুঃখ-দুর্দশার মাঝে। তবে তিনি কখনোই হাল ছেড়ে দেননি কিংবা হতাশহননি! রাওলিং সবকিছু থেকে শিক্ষা নিতেন। এর-ই ফল স্বরূপ তিনি এতগুলো প্রকাশকের কাছে থেকেনা শুনার পরও লেগে ছিলেন!

১৭, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮ ও ৩০ বছর বয়সে পৃথিবীর নির্মম বাস্তবতার শিকার হওয়া রাওলিং ঠিকই ৩৫ বছর বয়সে বেস্টসেলার চারটি বই লিখে ‘অথার অব দ্যা ইয়ার’ হন! ৪২ বছর বয়সে তার বই একদিনে ১১মিলিয়ন কপি বিক্রয় হয়! তিনি যখন পৃথিবীর নির্মম বাস্তবতার শিকার হচ্ছিলেন তখনো তিনি জানতেন একদিন তার জীবনটা বেশ সুন্দর হবে, তার নির্ঘুম রাতের স্বপ্নগুলো থেকেও সুন্দর হবে ভবিষ্যতের বাস্তবতা!

প্রতিটা সফল ব্যাক্তির জীবনে একটি ব্যর্থতার গল্প রয়েছে আর প্রতিটা ব্যর্থতার গল্পের একটি সফলতা রয়েছে। ব্যর্থতা মেনে নাও ; সফলতার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাও!

I am going to keep going untill I succied or die
-Harry Potter

তথ্যসূত্র : জে কে রাওলিং লাইফ স্টোরি।
লেখক : শিক্ষার্থী, কলেজিয়েট স্কুল, চট্রগ্রাম।