প্রবাস ডেস্ক : দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনোই যেন এক এগারো’র মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আগে থেকেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছি। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।পুরো লিখিত বক্তব্য পড়া শেষের আগেই সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে যান তিনি। বাংলা প্রেস।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির কারণে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।শিশু থেকে শুরু করে সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।এর ফলে সমাজে নানা অরাজক পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হচ্ছে। তাই দুর্নীতি রোধের মাধ্যমে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে তারাই দুর্নীতি প্রশ্রয় দিয়েছে, পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রথমে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযান শুরু করেছিলাম। সেখানে আমরা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। এবার আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলাম।

দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দুর্নীতির কারণে সেটা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। প্রকল্পের প্রতিটি পয়সা যাতে যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেই পদক্ষেপও নেয়া হবে।

প্রবাসীদের জন্য নতুন কী নীতিমালা নেয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধনমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার বিষয় হল, প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠালে আমরা ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। তারা যাতে সহজে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে, কোনো রকম অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থা আরেকটা হচ্ছে বিমান- অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল তখন বিমানের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি উড়োজাহাজ আমরা ক্রয় করেছি। এবার নিউ ইয়র্কে সরাসরি বিমান চলাচলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আইন ও নিরাপত্তা বিষয়েও ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া দেশে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানেও প্রবাসীরা যাতে বিনিয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন কমিটি গঠনে খুব শিগগির যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শক্তিশালী কমিটি গঠনে সময়ের প্রয়োজন।তাই সঠিক সময়েই সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীগের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারন নেই।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীগের নতুন কমিটি নিয়ে প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মিদের মাঝে গত একমাস ধরে চরম উত্তেজনার বিরাজ করছে। এ বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ আমার হাতেই তৈরি করা। এখানকার সবাইকেই আমি ভালোভাবেই চিনি ও জানি। এখানকার বিষয়টি অন্যদের চেয়ে আমিই ভালো জানি। তাই যথা সময়েই কমিটি করা হবে একটি সম্মলনের মাধ্যমে।ইতোমধ্যে অনেকেই তো কমিটি গঠন করেই ফেলেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।একটু সময় নিয়ে হলেও সম্মেলনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে,সামাজিক গণমাধ্যমে প্রধান দু’টি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও নতুন মুখের আজগুবি নাম প্রকাশ পাচ্ছে তা নিয়ে কর্ণপাত না করার জন্য নেতাকর্মিদের আহবান জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের সচেতন নেতার।

তারা বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের যে কমিটি উপহার দিবেন সকলেই মেনে নেবেন এতে কারো কোন আপত্তি নেই।দলীয় পটভূমিহীন, সাংগঠনিক অদক্ষতা ও দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তিদের কবল থেকে দলকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সা.সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৮ বছর আগে মেয়াদোক্তীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা মঞ্চে আওয়ামীলীগের কোন নেতাকে বসতে দেওয়া হয়নি। প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে সাধারন নেতাকর্মিদের বসার সুযোগ করে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুস সামাদ আজাদ।

গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা চলাকালীন সময় সাধারন নেতাকর্মিরা ‘নো মোর সিদ্দিক’ বলে শ্লোগানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মিরাদের দাবির মুখে প্রতিবছরের প্রথা ভেঙ্গে এবারে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সা.সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদসহ তাদের সমর্থনকারীদের মঞ্চে না উঠিয়ে সুষ্ঠ ও সুসশৃংখল পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে সার্থক করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯)