মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : শ্রীমঙ্গলের গহীণ অরণ্যঘেরা দুর্গম সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত, দেশের সর্ববৃহত শিল্প উদ্যেক্তা সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নাহার চা বাগানে দেশের চা শিল্পে প্রথমবারের মত চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে তাদের সুপেয় ও নিরাপদ পানি সর্বরাহ ও উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় স্থাপিত রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালের দিকে নাহার বাগানের ফেক্টরীর সামনে জাকঝমক পূর্ণ অনুষ্ঠান শেষে ফিতা কেটে সদ্য সমাপ্ত এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষনা করা হয়। এসময় সেখানে বাগানে কর্মরত কয়েকশ চা শ্রমিক, শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চাবাগানের ব্যবস্থাপক, শীর্ষব্যবসায়ী, উদ্যেক্তা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নাহার চাবাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্যর সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম এর সঞ্চালনায় আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, সিটি গ্রুপের প্রধান উপদেষ্ঠা মো. ফরিদ উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি কদর আলী, ওয়াটার এইড নির্বাহী পরিচালক নজমুল ইসলাম, সিন্দুরখান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ, ও ওয়াটার এইডের (আইডিয়া) ম্যানেজার পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাহার চাবাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্য বলেন , ওয়াটার এইড এর রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের কোম্পানীর নিজস্ব অর্থায়নে নাহার চাবাগানের কারখানায় রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম প্রকল্প তৈরী করেচি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম এর পানি ব্যবহার করে উন্নত ও মানসম্পন্ন চা তৈরী করা সম্ভব।

পূর্বে নাহার চাবাগান একটা জরাজীর্ন ও রুগ্ন প্রতিষ্ঠান ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে সিটি গ্রুপ বাগানটি ক্রয় করার পর থেকে আমাদের কোম্পানীর চেয়ারম্যানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সু-দৃষ্টির কারনে নাহার চাবাগানটি পুরো বাংলাদেশের মধ্যে একটি উন্নত ও মডেল বাগান হিসেবে রূপলাভ করেছে।

নিজের বক্তব্যে আবেগতারিত হয়ে পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্য বলেন, দুর্গম এলাকার এই চাবাগানের শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেখানে কুপিবাতি দিয়ে দিনাতিপাত করত সেখানে আজ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ, ১৫০টি পাকা শ্রমিকঘর, ১৪টি স্টাফ কোয়ার্টার,৩টি অত্যাধুনীক বাঙলো ও ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত চা উৎপাদনের লক্ষে নির্মিত উন্নত প্রযুক্তি নির্ভও ডিজিটাল কারখানা।

তবে এই বাগানের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে নিজের ভুমিকা উল্লেখ না করলেও উপস্থিত অনেক বক্তাদের কন্ঠে উচ্চারিত হয় কিভাবে একটি রুগ্ন চাবাগানকে দেশের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর চা বাগান হিসেবে নিজের জীবনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাহার চাবাগানের ব্যবস্থাপক পীযূষ কান্তি ভট্রাচার্য্য গড়ে তুলেছেন।

এদিকে দেশের চাবাগানগুলোতে প্রথমবারের মত চা শ্রমিকদের জন্য নির্মিত আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা ওয়াটার এইডের অর্থায়নে ও বেসরকারী সংস্থা আইডিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় নাহার চাবাগানে কর্মরত চারশ চা শ্রমিকের পূর্ণ পানি চাহিদা মিটানোর লক্ষে বৃষ্টির পানিকে সংরক্ষণ করে উন্নত ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে পুরো বছরের জন্য প্রায় ৩ লক্ষ লিটার নিরাপদ পানি মজুদের লক্ষে প্রকল্প কাজ বাস্তবায়ন হওয়ায় স্থানীয় চা শ্রমিকদের মাঝে তৈরী হয় আনন্দ।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯)