এন কে বি নয়ন


শরৎকাল মানেই শিউলি ফুল আর শিউলি ফুল নিয়ে আসে মা দুর্গার আগমনি বার্তা। সকালের উঠানে পড়ে থাকা শিউলি ফুলগুলো দেখলেই মন ভরে যায়; মনে করিয়ে দেয় আমার শৈশব, কৈশোরকে; মনে করে দেয় ফুলের ঝুড়ি নিয়ে ফুল কুড়ানোর দিন গুলো!

শহরের রাস্তায় রাস্তায় বাঁশের কাঠামো দিয়ে গেট বানানো,পাড়ায় পাড়ায় মন্দির গুলোতে প্রতিমা তৈরি এসব কিছুই প্রতিদিন একটু একটু করে মনে করিয়ে দেয় যে, মা আসছেন, ঘনিয়ে আসছে পূজোর দিন!!

শৈশবের সেই দিনগুলোতে স্কুল থেকে ফিরেই থাকতো মন্ডপে যাওয়ার তাড়া। পালদের মূর্তি বানানোর সেই অপূর্ব কৌশল অবাক হয়ে দেখতাম!আর বন্ধুরা মিলে সেখানে বসে গল্প করতাম কি ভাবে মা দুর্গা অসুর বধ করলেন, কিভাবে গনেশ মায়ের চারপাশ ঘুরেই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলেন, এমনি ধর্মীয় নানা গল্প আর আলোচনা চলতো পূজোর কোনদিন কোন ড্রেসটা পড়বো।

পূজোর দিন মানেই ছিলো স্বাধীনতার কয়েকটি দিন; পড়াশুনা থাকবে না, নিয়ম-কানুন থাকবে না,থাকবে শুধু গল্প, খাওয়া, বেড়ানো আর আনন্দের ছড়াছড়ি।পূজোর দিন মানেই ছিলো অপেক্ষার দিন, কবে ছুটি হবে আর কবে প্রিয় মুখগুলোকে দেখতে পাবো; দূরে থাকা প্রিয়জনের জন্য সে কী অপেক্ষা!

পূজোর সময় একবার প্রিয় মানুষটাকে দেখবার জন্য, তার চোখে চোখ রাখবার জন্য মণ্ডপে খোঁজার একটা নেশা ছিলো। এখন সে সব শুধুই হাসির খোরাক।

আবারও শরৎকাল এসেছে; শিউলি ফুলগুলো এখনো উঠানে পড়ে থাকে কিন্তু কুড়ানো হয় না। মন্ডপে পালেরা এখনও মূর্তি গড়ছেন কিন্তু এখন আর ছেলেমেয়েরা ওখানে বসে অসুর বধ বা গনেশের মাতৃভক্তির গল্পটা বলে না। এখন তারা ইউটিউব, ফেসবুকের স্ট্যাটাসের আপডেট খবরটা নিয়ে আলোচনা করে। পূজোর দিন গুলোতে ওরা আর মন্ডপের ভিড়ে ভিড় না বাড়িয়ে বাসায় ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকে।

আজকের আমিও প্রিয় সেই আবেগমাখা চোখ আর দেখতে পাই না,
অপেক্ষাও করি না প্রিয়মুখগুলোকে দেখবার জন্য। সবকিছুই কত্তো বদলে গেছে। তবুও শরৎকাল আসে শিউলি ফোটে মা দুর্গা আসেন পালেরা মূর্তি গড়েন। সব আগের মতোই তো আছে। শুধু সেই আনন্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে! হয়তো আমরাই অনেকটা বদলে গেছি নয়তো সময় আমাদের বদলে দিচ্ছে! তবু বলা বলতে হয় ভা লো বা সা অ বি রা ম!

লেখক : সম্পাদক দৈনিক কালের বাণী,সাপ্তাহিক সময়ের ভাবনা, দৈনিক জনকন্ঠের বোয়ালমারী সংবাদদাতা।