স্টাফ রিপোর্টার : অনলাইনের ক্যাসিনো থেকে অর্জিত টাকার একটি অংশ লন্ডনে যেত বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তবে লন্ডনে কার কাছে যেত, সেটি জানতে চলছে তদন্ত।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান-২ নম্বরে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানের বাড়ির নিচতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।

গুলশানে সেলিমের বাড়ি ও অফিসে অভিযানের বিষয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, সেলিম বর্তমানে কারাগারে থাকা ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ক্লোজ ফ্রেন্ড (ঘনিষ্ঠ) ছিলেন। তিনি মামুনকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এ ছাড়া সেলিম বিভিন্ন সময় লন্ডনে টাকা পাঠিয়েছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আমরা তাকে গ্রেফতার করি।

লন্ডনে তিনি কাকে টাকা পাঠাতেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের অধিনায়ক বলেন, ‘লন্ডনে কোথায় পাঠাতেন, সমীক্ষা করে জানাব।’

এই দুই অভিযানের বিষয়ে সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল আছে। এতে দেখতে পাই, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে ক্যাসিনো গেমিংয়ে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। গতকাল আমরা জানতে পারি, এটার প্রধান সমন্বয়ক/দলনেতা/অধিনায়ক সেলিম প্রধান বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছিলেন। আমরা তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হই এবং প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার বাসা ও অফিসে অবস্থান নেই। সারারাত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র পেয়েছি।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম র‌্যাবকে জানান, তার জন্ম ১৯৭৩ সালে, ঢাকায়। ১৯৮৮ সালে ভাইয়ের মাধ্যমে জাপানে গিয়ে জাপানিজদের সঙ্গে গাড়ির ব্যবসায় নিয়োজিত হন। পরে জাপানিদের সঙ্গে থাইল্যান্ডে গিয়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ব্যবসা করেন। পরে মি. দু নামের এক কোরীয় ব্যক্তি তাকে অনলাইন ক্যাসিনো খোলার উপদেশ দেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি ২০১৮ সালের পি-২৪ এবং টি-২১ হিসেবে দুটি গেমিং সাইট খোলেন। সেখান থেকে তিনি অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। তার কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ওই কোরীয় ও সেলিমের ৫০-৫০ অনুপাতে লাভ ভাগের চুক্তি হয়েছিল।

সেলিমের বাসা ও অফিসে যা পাওয়া গেল

দুই জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৪৮টি বিদেশি মদের বোতল, ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ নগদ টাকা, ২৩টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা (যার মূল্য ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা), ১২টি পাসপোর্ট, ১২টি ব্যাংকের ৩২টি চেকবই, একটি বড় সার্ভার, ৪টি ল্যাপটপ এবং দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

যে কারণে সেলিম গ্রেফতার

‘এটা ভার্চুয়াল ক্যাসিনো। আপনারা এতদিন মাঠে ক্যাসিনো বোর্ড দেখেছেন। এগুলো অনলাইনে খেলা হচ্ছে। অনলাইনে টাকা দিয়ে এগুলো খেলতে হয়। ধরেন, একটি মোবাইলে আপনি একটা সফটওয়্যার ইনস্টল করলেন (পি-২৪)। এগুলো খেলতে হলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এটি ভিসা, মাস্টার কার্ড, বিকাশ, নগদের হতে পারে।’

বলছিলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রেখে এটিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। কেউ টাকা জিতলে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা আসবে। হারলে টাকাগুলো একটি গেটওয়ের মাধ্যমে তিনটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যেত। সপ্তাহে একদিন সব টাকাগুলো এক ব্যাংকে দেয়া হত।

‘আমরা তার সহযোগী আক্তারুজ্জামানকেও গ্রেফতার করেছি। আক্তারুজ্জামান তার গেমিং সাইটটি চালাত এবং টাকাগুলো সংগ্রহ করে অন্য ব্যাংকে জমা করত। এরপর কোরীয় নাগরিক এসে এই টাকাগুলো নিয়ে যেত। এটি সরাসরি মানি লন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন।’

‘তাই তাকে ৪ টি অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথমত মানি লন্ডারিং, মাদকদ্রব্য, ফরেন কারেন্সি অ্যাক্ট এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের লঙ্ঘন।’

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০১, ২০১৯)