স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) তামাক নিয়ে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ইমাজিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট (ই-সিগারেট, ভ্যাপিং) : বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সচিব বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইমাজিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট যেমন- ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট নতুন প্রজন্মের তামাকপণ্য ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলপড়ুয়া তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহার ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইউসুফ হারুন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ে তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন ডাব্লিউএইচও রিপোর্ট অন গ্লোবাল টোব্যাবো এপিডেমিক ২০১৯ এ, ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সিডিসি এবং এফডিএ সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির ৮০৫ জনের ফুসফুসজনিত রোগ এবং ১২ জনের মৃত্যুর সঙ্গে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিংয়ের যোগসূত্র থাকার কথা নিশ্চিত করেছে। ভ্যাপিং এবং ই-সিগারেট ব্যবহার পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর মধ্যে বেশি হলেও বাংলাদেশও ঝুঁকিমুক্ত নয়।

এসব পণ্য ব্যবহারের মাত্রা কতটা বিস্তার লাভ করেছে সে বিষয়ে সবশেষ কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত নেই। তবে দেশে ইমাজিং টোব্যাকো পণ্যের ব্যবহার তরুণ এবং যুবসমাজের মধ্যে ক্রমন্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠছে অসংখ্য বিক্রয় কেন্দ্র। অনলাইন এবং ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ইউসুফ হারুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে খসড়াজাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে । এটি শিগগিরই চূড়ান্তকরণের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩০টির অধিক দেশ এসব পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। সুতরাং এই বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নানাবিধ পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ২০১৭ সালে হ্রাস পেয়ে ৩৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সুতরাং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-সিগারেট, ভ্যাপিংসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০১৯)