নিউজ ডেস্ক : মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে আজ। ‘মহাশক্তি মহামায়া দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গাকে ভক্তি ভরে বরণ করে নেবেন সারা দেশে প্রায় তিন কোটি হিন্দু নর-নারী। 

মন্দিরের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। ঢাকের বোল কাঁসার ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলো।

হিন্দু পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবীদুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পুজোকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দু ধর্মমতে অকালবোধনও বলা হয়।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানিয়েছেন, এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ১০০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এবার মণ্ডপ বেড়েছে এক হাজারটি। ঢাকা মহানগরে এবার ২৩৭টি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৪টি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) পঞ্চমীর সন্ধ্যায় ছিল দেবীর বোধন। বোধন শব্দের অর্থ চৈতন্যপ্রাপ্ত বা জাগরণ। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অন্যতম আচার।

আজ ৪ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠীতে দশভূজা দেবীদুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে মূল পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

৫ অক্টোবর শনিবার সকালে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের পর শুরু হবে মহাসপ্তমী পূজা। ৬ অক্টোবর রবিবার মহাঅষ্টমী পূজা, সে দিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। ৭ অক্টোবর সোমবার সকাল বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমী পূজা এবং ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

পাঁচ দিনব্যাপী মণ্ডপে মণ্ডপে চলবে পূজা-অর্চনা, ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা।

শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয় দশমী উপলক্ষে আগামী ৮ অক্টোবর সরকারি ছুটি থাকবে। বিজয় দশমীতে বঙ্গবভনে দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রপতি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে শুভেচ্ছাবিনিময় করবেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ওই দিন বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ নিবন্ধ।

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সারা দেশে বিভিন্ন আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে। শুভ মহালয়ার মাধ্যমে দেবীদুর্গা পা রাখেন মর্ত্যলোকে।

মহালয়া পূজার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হলো উল্লেখ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবীদুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, যাবেনও ঘোটকে চড়ে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধীমান দাস বলেন, দেবীর ঘোটকে আগমন মানে সব কিছু ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া। এর মানে দেবী আমাদের এক সতর্কবার্তা দিয়েই আসছেন। সুখ-দুঃখকে পাশাপাশি রেখে আমরা পথ চলব।

এ দিকে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারো নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, পোস্তগোলা, ডেমরা, শ্যামবাজার ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন। ৮ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিমাগুলো নিয়ে হবে শোভাযাত্রা।

নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান র‌্যালিটি যাবে নগরীর ওয়াইজঘাটে। রাত ১০টার মধ্যে সব ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছে পূজা কমিটি।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারা দেশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সারা দেশের পূজামণ্ডপে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০৪, ২০১৯)