তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীল করতে সর্বশেষ প্রযুক্তি ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। ২০২১ সালের মধ্যে এ ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অধীনস্থ সব দপ্তর/সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত সেবা সমূহের তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

এ বিষয়ে সম্প্রতি বিটিআরসি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা এবং নীতিমালা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে মতামত চেয়েছে। এ জন‌্য বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে।

বিটিআরসির সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপারেটরের তিন কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক ফোর-জি সেবা গ্রহণ করেছে, যা শতকরা হারে মোট গ্রাহকের মাত্র ২০ শতাংশ। চারটি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক ১৫ কোটি। মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ-জি; যেখানে অনেক দ্রুতগতিতে ইন্টারনেটে তথ্য ডাউনলোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক। এটা আসলে রেডিও তরঙ্গের আরো বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময়ে একই স্থানে বেশি মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে।

মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশের ধারাবাহিকতায় সরকার ফাইভ-জি সেবা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবার সর্বশেষ সংস্করণ হলো ফাইভ-জি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ফোর-জি বা টু-জি চেয়ে নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি বহুগুণ বাড়বে এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা ও কার্যক্রম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সম্পাদন করা যাবে।

এই প্রযুক্তিতে গ্রাহকরা অতি তাড়াতাড়ি তথ্য পাবে, স্পেকট্রাম দক্ষতা, তথ্য আদান-প্রদানের গতিশীলতা বাড়বে, নেটওয়ার্কেও ডাইমেনশন আসবে। এছাড়া ইন্টারনেটের বিষয়গুলো যন্ত্র থেকে যন্ত্র কমিউনিকেশনের জন্য ব্যবহার করা ডিভাইসগুলোকে গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের ফাইভ-জি সেবা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফাইভ-জি সংশ্লিষ্ট পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা এবং নীতিমালা প্রণয়নের নিমিত্ত সরকারের প্রতিনিধি, টেলিযোগাযোগ সেক্টরের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এবং অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত এপ্রিলে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে ,পরিকল্পনা অনুযায়ী ফাইভ-জি সেবা চালু ও প্রদান করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং সরকারের সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনস্থ সব দপ্তর বা সংস্থাসমূহের সহায়তা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধীনস্থ সব দপ্তর বা সংস্থাসমূহের তথ্যাদি সংযুক্ত ছক অনুযায়ী বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় মতামত জানাবে। মতামত জানানো শেষ সময় সীমা হচ্ছে ৩০ অক্টোবর।

ফাইভ-জি সম্পর্কে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশের ২০২১ সাল নাগাদ মোবাইলে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু হবে। দেশে জনসাধারণের যে চাহিদা আছে. তা আমরা বুঝতে পারি। জনগণের কথা চিন্তা করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ফাইভ-জি প্রযুক্তি আনা হচ্ছে।

জানা গেছে, ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকটা নতুন পরিবর্তন আনবে। ফাইভ-জি ড্রোনের মাধ্যমে গবেষণা এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা হবে, অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করবে। আর সে সবের জন্যই ফাইভ-জি প্রযুক্তি সহায়ক হবে। চালকবিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য পড়ার জন্যও ফাইভ-জি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মোবাইল গেমাররা আরো বেশি সুবিধা পাবেন। ভিডিও কল আরো পরিষ্কার হবে। সহজেই এবং কোনোরকম বাধা ছাড়াই মোবাইলে ভিডিও দেখা যাবে। শরীরে লাগানো ফিটনেস ডিভাইসগুলো নিখুঁত সময়ে সংকেত দিতে পারবে, জরুরিভাবে চিকিৎসা বার্তাও পাঠাতে পারবে।

বিভাগীয় ও জেলাপর্যায়ে ফোর-জি সেবার মান পর্যালোচনা করে বিটিআরসি তার প্রতিবেদনে বলেছে, সব অপারেটরই ঢাকার বাইরে কাঙ্খিত মানের সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে টেলিটক ঢাকার বাইরে এখনো ফোর-জি চালু না করায় রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটরটিকে হিসাবের বাইরে রেখেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের ফোর-জি সেবার মান সম্পর্কে বলা হয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি হওয়ার কথা সাত এমবিপিএস। কিন্তু এদের কেউই এই গতিতে সেবা দিতে পারছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্ধেক গতি পেয়েছে বিটিআরসি।

টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুরে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করে তারা এই ফল পেয়েছে। এবারের প্রতিবেদনে রাজধানীকে বাইরে রাখা হলেও এর আগের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ঢাকাতেও কাঙ্খিত গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অপারেটরগুলো। এ অবস্থায় দেশে ফাইভ-জি প্রবর্তনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১১, ২০১৯)