স্টাফ রিপোর্টার : চলতি মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞা ভারত তুলে নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ফলে পেঁয়াজের বাজার শিগগিরই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।

সোমবার সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বস্ত্র খাতের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা ও ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় কমিটির সভার আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার একটা সাধারণ উৎসবের কারণে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রেখেছিল। ফলে সাপ্লাই বন্ধ ছিল, বর্তমানে সেটা মিটে গেছে। তারপরও অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। আমরা পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমি অবশ্য দেশে ছিলাম না। আমাদের সচিব পেঁয়াজ আমদানিকারদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন। বড় কিছু আমদানিকারক যেমন সিটি গ্রুপের সঙ্গে কথা হয়েছে, এ ধরনের বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজের দামের সমস্যাটা সাময়িক। কারণ সোর্স যেটা ছিল সেটা বন্ধ হওয়ার কারণে চাপটা বেড়ে গেছে। ভারতেও এখন ৫৫-৬০ ইন্ডিয়ান রুপিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দামটা আরও কিছুদিন থাকতে পারে। আশা করছি, এ মাসের শেষে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সেটা তুলে নেবে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আশা করা যায় চলতি মাসের শেষে তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।

চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গোডাউনে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে- এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যুগ্মসচিবদের প্রধান করে কয়েকটি কমিটি করা হয়েছিল। তারা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখেছে, কোথাও কোনো মজুত আছে কি না। যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কাজ চলছে সেগুলোও দেখা হচ্ছে। আমি আজই তাদের সঙ্গে বৈঠক করব।’

কিছুদিন কম ছিল আবার বাড়ল কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ আমদানি হয় মূলত ভারত থেকে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় সবাই মিয়ানমারে গেছে তখন একটু চাপ পড়েছে। তারপরও মিয়ানমার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে অন্তত ৪-৫ দিন লাগবে। তারপরও সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটা নিচ্ছে।

‘ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাবো। শক্ত অবস্থানটা কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যদি অবৈধ কোনো মজুত করে রাখেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে। বাজারে কি অবস্থা বিরাজ করছে সেটাও দেখব। ’

১৫ দিন আগে বলেছিলেন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিটা বেশি দিন থাকবে না। আবার দাম বাড়ল এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে কি বলবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আজও বলব প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটু কষ্ট করতে হবে। যেহেতু আমাদের নিজেদের উৎপাদন কম, সেহেতু আমাদের পরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এ চাপটা থাকবে।’

রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের একটা স্নায়ুবিক অবস্থান তৈরি হয়েছিল, সেখানে কৃষিপণ্যের জন্য তাদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এটা কি বাংলাদেশকে দুর্বল করে দিচ্ছে না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা হলে তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হয়নি। সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এটা আলোচনা করে সমাধান হবে। তাই বলে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে নয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এ খবরে রাতারাতি খুচরা ও পাইকারি বাজারে হু-হু করে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। পরদিন সব ধরনের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ১০৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৩০ টাকায় ওঠে। এরপর মাঝাখানে পেঁয়াজের দাম কমলেও কয়েক দিন থেকে আবার বাড়তে শুরু করে।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১৪, ২০১৯)