আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চতুর্থ বাঙালি হিসেবে এবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। যৌথভাবে একই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তার স্ত্রী এস্থার দুফলো এবং মার্কিন অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমার।

উন্নয়ন অর্থনীতি-বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ বিষয়ে গবেষণায় অবদান রাখার জন্য অর্থনীতিতে এবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এই ত্রয়ী।

এর মধ্যদিয়ে চতুর্থ বাঙালি হিসেবে নোবেলের তালিকায় নাম তুলে নিলেন অভিজিৎ। আর তার স্ত্রী এস্থার দুফলো সর্বকনিষ্ঠ ও দ্বিতীয় নারী হিসেবে পেলেন অর্থনীতির নোবেল।

ফরাসি নাগরিক এস্থারের আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে অর্থনীতি পরিচালনায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্মানজনক এ পুরস্কারে ভূষিত হন মার্কিন নারী অ্যালিনর অস্ট্রম।

এদিকে ১৯৯৮ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল ঘরে তুলে নেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, উন্নয়ন অর্থনীতি ও গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কারণ বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ সম্মান দেয় দ্য রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।

তার ২১ বছর পর, দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে এই বিষয়ে নোবেল পেলেন অমর্ত্য সেনের-ই ছাত্র অভিজিৎ। তার জন্ম ১৯৬১ সালে, ভারতের মুম্বাইয়ে।

তবে পড়াশোনার হাতেখড়ি কলকাতায়, সেখানকার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে প্রাথমিক স্কুল সম্পন্ন করেন তিনি। পরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে স্নাতক পাস করে অভিজিৎ সে বছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এরপর ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন তিনি। হার্ভার্ডে তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইনফরমেশন ইকোনোমিক্স’।

পরবর্তীকালে তিনি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ২০১৭ সালে পেয়ে যান মার্কিন নাগরিকত্ব।

বর্তমানে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজিতে (এমআইটি) অধ্যাপনা করছেন প্রফেসর অভিজিৎ।

তার গবেষণার মূল বিষয় মূলত ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’। এ গবেষণায় অভিজিৎ-এর সহকর্মী রয়েছেন তার স্ত্রী ও এবারের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলো এবং মাইকেল ক্রেমার।

গবেষক অভিজিৎ-এর যেনো রক্তে মিশে আছে ‘অর্থনীতি’। তার বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। তার মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পড়িয়েছেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের অর্থনীতি বিভাগে।

৫৮ বছর বয়সী অভিজিৎ-এর আগ্রহের বিষয় ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’। এসব বিষয়ে চারটি বইসহ অসংখ্য গবেষণা প্রতিবেদন রয়েছে তার।

২০১২ সালে ‘পুওর ইকোনমিকস’ বইয়ের জন্য অভিজিৎ-এস্থার দম্পতি যৌথভাবে জেরাল্ড লুয়েব পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৩ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বিশেষজ্ঞ প্যানেলেও কাজ করেছেন প্রফেসর অভিজিৎ। উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে এই বাঙালি অর্থনীতিবিদ নোবেল ছাড়াও একাধিক পুরস্কার পুরেছেন নিজের ঝুলিতে।

এর আগে ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে নোবেল জিতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন। আর ২০০৬-এ শান্তিতে সম্মানজনক এ পুরস্কার ওঠে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১৪, ২০১৯)