উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালীদল মর্টার ও আর-আর-এর সহায়তায় পাকসেনাদের বাডিসা ঘাট অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড়ঘন্টার এই যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। বাডিসা ঘাট আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের রাজাসার দীঘির অবস্থানের ওপরও মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৬ জন পাকসেনা নিহত ও কয়েকটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়।

কুমিল্লায় সুবেদার আবদুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা মন্দভাগ বাজারের পশ্চিম দিকে দেউশ নামক স্থানে এক কোম্পানী পাকসৈন্যকে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন মেজর, একজন লেঃ সহ ১০০ জন সৈন্য নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে ৬টি এম-জি-আই-এ-৩, ৭টি এল-এম-জি, ৭০টি জি-৩ রাইফেল, ৩টি ৮৩ এম-এম-বি-সি, ১টি অয়ারলেস সেট, ৩টি র্র্২র্ মর্টার ও কয়েকটি ট্রানজিস্টার দখল করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী নয়াদিল্লীতে এক অনুষ্ঠানে সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর হামলা সম্পর্কিত পাকিস্তানের অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী নয়, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। মুক্তিবাহিনীতে দেড় লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে এবং এঁদের প্রায় ৫০ হাজার পুলিশ, বিডিআর ও সেনাবাহিনী সদস্য। তারা সবাই বাঙালি এবং ২৫ মার্চ রাতে এদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম আক্রমণ করার পর এরা প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেয়। তাঁরা মাতৃভ’মির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল রেডক্রসের হাতে হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতাল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গভর্নর ডাঃ এ.এম. মালিক সেবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তানের খেদমতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা করেন, তার দল জোট গঠনের জন্য যে কোনো দলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

৫নং সেক্টরে লেঃ তাহেরউদ্দিন আখঞ্জির নেতৃত্বে দুই কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা ২৫টি নৌকায় করে ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টর থেকে গৌরীনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা গৌরীনগরের কাছাকাছি এলে পাকসেনারা গৌরীনগর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচন্ড গুলি চালায়। পাকসেনাদের অকস্মাৎ আক্রমণে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৬ জন গুরুতর রূপে আহত হন।

পূর্ব পাকিস্তানের সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল হক চট্টগ্রামের দালালদের এক সভায় বলেন, ‘বিদ্রোহ কোনোদিন সফল হয়নি। ভারতীয় প্রচারযন্ত্রের মিঠা বুলিতে আকৃষ্ট হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা ভারতে গিয়ে বিদ্রোহ ছড়াচ্ছে। তারপরও প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।’ বিদ্রোহীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো মতেই কিছু সংখ্যক বিদ্রোহীর কারণে পাকিস্তানের ১৩ কোটি মানুষ দুর্ভোগ পোহাতে পারে না।

পূর্ব পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আবুল কাসেম বেতার ভাষণে বলেন, ‘যখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন জনজীবন বিপর্যস্ত প্রতিটি মানুষ যখন দিশেহারা, তখন নবগঠিত মন্ত্রীসভার একজন সদস্য হিসাবে যোগ দিয়ে জাতির প্রতি কর্তব্য পালনে এগিয়ে এসেছি। বিভ্রান্ত হয়ে যারা এদেশ ছেড়ে শত্রুদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, নিজেদের হাতে গড়া পাক ভ’মিতে নির্ভয়ে ফিরে পুনগঠনের কাছে আত্মনিয়োগ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/অ/অক্টোবর ১৮, ২০১৯)