স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) প্রশ্নপত্র কি ফাঁস হয়েছে? গত ১১ অক্টোবর পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, খুলনার ‘থ্রি ডক্টরস কোচিং’ সেন্টার থেকে মেধা তালিকায় দ্বিতীয়সহ ২৮০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। একটি কোচিং সেন্টার থেকে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ পাওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নপত্র কারসাজি বা প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে কানাঘুষা চলছে সারাদেশে।

থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে মেধাতালিকায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া ২৮০ জনের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চান্স পেয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় মেধাতালিকায় দ্বিতীয়, ১৯তম, ২০তম ও ৩২তম হন ওই কোচিংয়ের শিক্ষার্থীরা। শুধু চলতি বছরই নয়, গত বছর (২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ) একই প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ২৭৩ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে- এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, ফাঁসের কোনো সুযোগও ছিল না। এমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয়। অংশগ্রহণকারী ৬৯ সহস্রাধিক পরীক্ষার্থীর জন্য পৃথক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। একজনের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আরেকজনের প্রশ্নপত্রের কোনো মিল ছিল না। সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী পদ্ধতিতে গৃহীত এবারের পরীক্ষায় মোট ৮০ লাখ ধরনের প্রশ্ন ছিল।

তিনি বলেন, প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে পাশাপাশি দেখাদেখি করেও এক ঘণ্টায় কোনো শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না। কোন কোচিং সেন্টার থেকে কত শিক্ষার্থী সুযোগ পেল, কেন কম-বেশি পেল, তা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদফতরের নয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে শুরু করে পরীক্ষার হলে বিতরণ পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল বলে তিনি জোর দাবি করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, খুলনার একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে পরীক্ষার আগেই অভিযোগ ওঠায় এবার ওই কেন্দ্রে মোট ১১ জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত করা হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটরা পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছিল। এখন বিতর্ক তুলে পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

তবে খুলনা জেলা প্রশাসন বলছে, থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. তারিমের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ ও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অবশ্য থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ইউনুস খান তারিম জাগো নিউজকে বলেন, অতীতের ন্যায় আমরা সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি। এবার আমাদের কোচিং থেকে ২৮০ জনের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) চান্স পেয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মেধা তালিকায় দ্বিতীয়, ১৯তম, ২০তম ও ৩২তম হয়েছে।

গত বছর (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং করেছেন এমন ২৮ জন ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। মোট ২৭৩ শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হন। যাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ৮৬ জন ঢাকার অন্য চারটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

এর আগের বছর ওই কোচিং সেন্টার থেকে বিভিন্ন মেডিকেলে ২৬৪ জন ভর্তি হন। প্রতি বছরই সরকারি মেডিকেলে এখানকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি জানান।

গত ১৫ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষ (২০১৯-২০) ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে পাস করেন ৪৯ হাজার ৪১৩ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে পরীক্ষার্থী ২২ হাজার ৮৮২ ও মেয়ে পরীক্ষার্থী ২৬ হাজার ৫৩১।

১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন একজন ছেলে শিক্ষার্থী, তার প্রাপ্ত নম্বর ৯০ দশমিক ৫। মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন ৮৯।

নতুন পদ্ধতিতে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দেশব্যাপী একযোগে ১৯টি কেন্দ্রের ৩২টি ভেন্যুতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

(ওএস/অ/অক্টোবর ১৮, ২০১৯)