রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জোরপূর্বক জমিসহ বাড়ি দখল করে সমিতির সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের ৩ নেতাসহ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে এক ভুক্তভোগী পরিবার। প্রকাশ্যে মারধর ও ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র লুটপাট করে পরিবারটিকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে ভূমিদস্যুরা। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, দুদক, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছে পরিবারটি।

রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জামালপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল জাফু ও সদস্য সরোয়ার হোসেন শান্তসহ স্থানীয় ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ১৫ শতাংশ জমিসহ বাড়িঘর দখলের অভিযোগ করা হয়। এছাড়া দখলদারদের কাছ থেকে বসতবাড়ি ও জমি ফিরিয়ে দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পরিবারটি।

সংবাদ সম্মেলনে জামালপুর পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের বামুনপাড়া গ্রামের নূরুল ইসলামের কন্যা মোছা. চায়না আক্তারের লিখিত বক্তব্যে জানা গেছে, বামুনপাড়া পাইনের মোড় এলাকায় তীর্থচন্দ্রা মৌজার ১৩ নং সিএস খতিয়ানভূক্ত ৮৬ নং সিএস দাগের ১৫ শতাংশ জমিতে মা-বাবাসহ তিন বোন ও এক ভাই নিয়ে বসবাস করছিল নূরুল ইসলামের পরিবারটি। ২০১১ সালের ১০ মে নূরুল ইসলামের পৈত্রিক সূত্রে ও ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত এই জমি থেকে সরে যাবার হুমকি দেন স্থানীয় দখলবাজ এম এইচ এম শামসুদ্দোহা ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ। এ ঘটনায় তখন জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ করা করা হয়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা থেকে নোটিশের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে ডেকে নিয়ে দলিলপত্রাদি পর্যালোচনা করা হয়। নূরুল ইসলামের দলিলপত্রাদি সঠিক থাকায় বিবাদীদের নূরুল ইসলামের বাড়িতে যেতে নিষেধ করে তৎকালীর অফিসার ইনচার্জ। এরপর ২০১৫ সালের ১০ জুন একইভাবে ওই জমি দখল নিতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার মৃত ছানোয়ার হোসেনের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মি আক্তারুজ্জামান মিস্টার। সেদিনই সদর থানায় অভিযোগ জানালে দলিলপত্র দেখে সেখানে নূরুল ইসলামকেই বহাল থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ওই জমি দখল করতে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দের নেতৃত্বে দেশীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাফর ইকবাল জাফু, সরোয়ার হোসেন শান্ত, এমপি মির্জা আজমের কেয়ারটেকার শাহীন মিয়া, বামুনপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে সবুজ মিয়া, নালু মিয়ার ছেলে নয়ন ও নওয়াব আলীর ছেলে মুকছেদসহ প্রায় ৫০ জনের একটি সসস্ত্র দল নূরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায়।

নূরুল ইসলামের স্ত্রী মলেদা বেগমসহ তার সন্তানদের মারধর করে ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র লুট করে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় সসস্ত্র দলের লোকজন। জমিতে থাকা গাছপালা কেটে ফেলে, পুকুরের পানি সেচে মাছ মেরেও নিয়ে গেছে তারা। পরে সেখানে সমমনা বহুমূখী সমবায় সমিতি লি. এর সাইনবোর্ডের জমি লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে দলখবাজরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন পরিবারটি।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের নূরুল ইসলাম, স্ত্রী মলেদা বেগম, কন্যা চায়না আক্তার, নুরেজা খাতুন ও মেয়ে জামাই রুকুনুজ্জাম উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা ও সমিতির সদস্যদের উপস্থিতিতে সেখানে বাউন্ডারি করা হচ্ছে। ঘরে টানানো হয়েছে সমমনা বহুমূখী সমবায় সমিতির সাইনবোর্ড। পুকুরে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৮ মাস আগে এই জমি মাফুজুল হকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে সমমনা বহুমূখী সমবায় সমিতি। নূরুল ইসলামের পরিবার এখানে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করছিল। যেহেতু এই জমি সমিতির, তাই এটা দখলে নিয়েছে সমিতির সদস্যরা। কাউকে মারধর করা হয়নি। লুটপাটের যে অভিযোগ, তা মিথ্যা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর ইকবাল জাফু বলেছেন, আমি সমমনা বহুমূখী সমবায় সমিতির সদস্য হিসেবে দুপুর ২ টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির বাসার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়া বলেছেন, আমি কোনো মারধর করিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ওসি সালেমুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেনি, কোনো মামলাও হয়নি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।

(আরআর/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০১৯)