রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দু’ বছরের এক শিশু সন্তানসহ তালাকপ্রাপ্ত এক মহিলাকে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ চাপড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।  আমঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এসিডদগ্ধরা হলেন আশাশুনি উপজেলার চাপড়া গ্রামের একরাম গাজীর মেয়ে ফাতেমা খানম (২৯) ও তার মেয়ে জাকেয়া মেহজাবিন (২)।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমা খানম জানান, ২০০৬ সালের ৫ মার্চ তার সঙ্গে নড়াইল জেলা সদরের পঙ্কাবিলা গ্রামের শওকত মোড়লের ছেলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রী শাহজাহান মোড়লের বিয়ে হয়। বর্তমানে তার জাহেরা খাতুন (৯) ও জাকেয়া সেহজাবিন (২) নামের দু’টি মেয়ে রয়েছে। জাহেরা আশাশুনির চাপড়া প্রিকেডেট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামীর সঙ্গে বড় ভাবীর অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তার স্বামী মাদকাসক্ত। উভয় ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাকে নির্যাতন করা হতো।

তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে বড় মেয়েকেও মারপিট করা হতো। এ কারণে তাকে কয়েকবার আশাশুনির দক্ষিণ চাপড়া গ্রামে ফুফু হাওয়া বেগমের বাড়িতে রেখে যাওয়া হয়। বিদেশ যাওয়ার নাম করে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দু’ মেয়েসহ তাকে ফুফুরে বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর শাহজাহান আর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো না। একপর্যায়ে তিনি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বামীকে তালাকনামা পাঠান। তালাকনামা পেয়ে শাহজাহান তাকে মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।

ফাতেমা খানম আরো জানান, খুলনার আলতাপোলে শিয়া সম্মেলন শেষে তিনি সোমবার রাত ৮টার দিকে ফুফুর বাড়িতে ফেরেন। বোরকা খুলে ছোট মেয়েকে নিয়ে উঠানের পাশে বাথরুমে যাওয়ার সময় শাহজাহান তাকে উদ্দেশ্য করে এসিড ছুঁড়ে মেরে মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এতে তার মুখমণ্ডল, বুক ও ডান হাতের কিছু অংশ ঝলসে যায়। মুখের ডান পাশের অংশ ঝলসে যায় ছোট মেয়েটির। প্রথমে তাদেরকে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অবস্থার অরনতি হওয়ায় তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সকালে মোবাইল ফোনে শাহজাহান বলেন, তিনি সোমবার নড়াইলে ছিলেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হাফিজুল্লাহ বলেন, ফাতেমার শরীরের ২৭ শতাংশ দাহ্য পদার্থে ঝলসে গেছে। তবে কি ধরণের এসিড তা এই মুহুর্তে বলা যাবে না। বাচ্চাটির মুখের ডান পাশ ঝলসে গেছে। তাদেরকে উন্নত চিকিঃসার জন্য ঢাকা এসিড সার্ভাইভাস ফাউণ্ডেশনে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০১৯)