রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : যৌতুকের দাবিতে এক কলেজ ছাত্রী গৃহবধুকে নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী ও ননদসহ ছয়জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তার বুধবার বিকেলে এ আদেশ দেন।

কারাগারে যাওয়া আসামীরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার খোসালখালি গ্রামের শাহাবাজ আলী গাজী, তার ছেলে শাহারিয়ার হোসেন, একই গ্রামের এজাহার আলী গাজীর ছেলে শাহাবাজ আলী, আমির আলী গাজী, সামছুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন ও কলবাড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ও ৩৪ নং বুড়িগোয়ালিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাজমা পারভিন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি গ্রামের কুরবান আলী সরদারের মেয়ে সঙ্গী পারভিনের সঙ্গে একই উপজেলার খোসালখালি গ্রামের শাহাবাজ আলীর ছেলে কলেজ পড়–য়া শাহারিয়ার হোসেনের এক লাখ ৭৯ হাজার নয় শত নিরানব্বই টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাতাকে একটি টিভিএস মোটর সাইকেল, সোনার গহনাসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল দেওয়া হয়। জামাতাকে ঢাকায় পড়ানোর জন্য কয়েক কিস্তিতে পাঁচ লাখ টাকাও দেওয়া হয়।

বিয়ের কিছুদিন পর যৌতুকের দাবিতে সঙ্গীকে স্বামী, ননদ, ননদাই ও শ্বশুর,চাচা শ্বশুর নির্যাতন করতো। বাবা, চাচা, বোন ও দুলাভাইদের পরামর্শে শাহারিয়ার ব্যবসার জন্য শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে পাঁচ লাখ টাকা আনতে বললে সঙ্গী পারিভন গত ২৮ জুন বাড়িতে এসে সকলকে বিষয়টি খুলে বলে। বিষয়টি নিয়ে কলবাড়ি গ্রামের ননদ নাজমা পারভিনের বাড়িতে শালিসি বৈঠক হয়। তাতে যৌতুকের টাকা না নিয়ে সঙ্গীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয় শাহারিয়ার ও তার স্বজনদের।

একপর্যায়ে ১৮ জুলাই নাজমার বাড়িতে থাকাকালিন পাঁচ লাখ টাকা ছাড়া সঙ্গীকে বাড়িতে নিয়ে যাবে না বলে শাহারিয়ার ও তার স্বজনরা জানান। প্রতিবাদ করায় সঙ্গীকে মারপিট ও গালিগালাজ করা হয়। পরে সঙ্গীকে শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান তার বাবা। নিরুপায় হয়ে হক ২২ জুলাই সঙ্গী তার স্বামী, শ্বশুর, ননদ, ননদাই ও চাচা শ্বশুরের নামে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

বিচারক হোসনে আরা আক্তার শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। মৎস্য কর্মকর্তা ৮ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় গত ১৬ অক্টোবর সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। বুধবার আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে শুনানী শেষে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাড. এসএম জহুরুল হায়দার বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০১৯)