স্টাফ রিপোর্টার : ফেনীর সোনাগাজীতে বহুল আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা মাত্র দেড় মাসের মাথায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। 

আর সেই প্রতিবেদন ও সার্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

স্বল্প সময়ের মধ্যে নিখুঁত একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নিখুঁত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি আমরা। এ মামলার তদন্তে সর্বোচ্চ মেধা প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের আবেগের বিষয়টিও জড়িত ছিলো।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এ মামলার তদন্তে আমরা সর্বোচ্চ অ্যাফোর্ড দিয়েছি। যারা তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ মহাপরিদর্শকেরও (আইজিপি) কঠোর নির্দেশনা ছিলো।

‘আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই এমন নুসরাত রয়েছে, তাই এখানে আবেগের বিষয়টিও জড়িত ছিলো। সর্বোচ্চ মেধা প্রয়োগের পাশাপাশি কিছু ষড়যন্ত্র ছিলো, সেগুলো আমরা উপেক্ষা করতে পেরেছি। আমরা যেটা দাবি করেছিলাম, সেটা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি বলেন, প্রত্যেকটা অপরাধেই ঘটনাস্থলের স্কেচ ম্যাপ থাকে, সেটি আমরা নিখুঁতভাবে করতে পেরেছিলাম। ঘটনাস্থলের ডিজিটাল ম্যাপ, লিংক চার্ট এবং এবারই প্রথমবারের মতো রং-তুলি দিয়ে ঘটনাস্থলের বিবরণের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেছি।

‘আমরা সবসময়ই চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। তারপরও এখানে অনেকগুলো ব্যাপার থাকে। তদন্তের বিষয়গুলো আদালতে কীভাবে উপস্থাপিত হলো ইত্যাদি বিষয়। যারা পিপি রয়েছেন তারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এছাড়া, গণমাধ্যমও কাউকে ভুলে যেতে দেয়নি।’

মামলার তদন্তে অভিনব পন্থা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করে পিবিআই প্রধান বলেন, ঢাকায় আনার আগেই একটি জবানবন্দি দিয়েছিল নুসরাত। আমরা তার সেই ভিডিওটি সংগ্রহ করে এটাকেই সত্য ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করি। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আমরা দুইজন নারী অফিসার পাঠিয়ে আবারও তার জবানবন্দি নিই। ঘুরে ফিরে নুসরাত কয়েকজনের নামই বলছিল।

‘এরপর ২-৩ দিনের মধ্যে নূর উদ্দিন ও শামীমকে গ্রেফতার করি, তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ হত্যাকাণ্ডটি মাদ্রাসার ভেতরে হয়েছে, বাইরের কেউ জানতো না, দেখেওনি। তাই যারা ভেতরে ছিল একে একে তাদের গ্রেফতার করে তথ্য সংগ্রহ করি আমরা।’

কারাগারে বসে অধ্যক্ষের হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, আমার কর্মজীবনে কখনও এমন ঘটনা তদন্ত করিনি বা দেখিনি যে কেউ কারাগারে বসে একজন হত্যার পরিকল্পনা ও হুকুম দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্তের সময় আমরাও নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। তবে আমরা যাদের জবানবন্দি নিয়েছি তাদের কথায় অধ্যক্ষের পরিকল্পনার কথাটি উঠে এসেছে।

‘আমরা এসব তথ্য নিয়ে আমাদের এসআইসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। নিখুঁতভাবে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়ে আমরা সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি,’ বলেন তিনি।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০১৯)