স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : ছেলের চাকুরিচুত্য’র প্রতিবাদে দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেন অভিমান করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রত্যাখানের ঘটনায় সেই আলোচিত এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার মহসেন উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় চলছে। বইছে, নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়। ডিসি’কে প্রত্যাহারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ডিসি অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে,মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানেরা।প্রয়াত সেই আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবরে পুস্প মাল্য অর্পন, জিয়ারত ও তাঁর স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এবং রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে.এম.তারিকুল ইসলাম। স্বজনদের সাথে কথা বলার সময় হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি নুর ইসলামকে চাকুরি দেয়ার কথা ঘোষণা দেন।

“জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম-স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাই না।”

দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’তে চিকি’ৎসাধীন অবস্থায জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপিকে লিখে যাওয়া চিঠি’র প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই সমাধিত করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেনকে। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের দাফনের বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা ও জেলাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভর সঞ্চায়ন হয়। ডিসি’কে প্রত্যাহারের দাবীতে ডিসি অফিসের সামনে আজ সোমবার প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানেরা । বক্তব্য রাখেন,জেলা মািক্তযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো.সাইদুর রহমান মো.আকবর হোসেন, জুয়েল প্রমুখ।

ফুঁসে ওঠার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ছেলের হারানো চাকুরি ও বাড়ি ফেরত দিতে চাইলেও তা প্রত্যাখান করেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ পরিবারটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষি বক্তিদের শান্তি দাবী করেন।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নুরনাহারম ছেলে নুরুজ্জামান, নুর হোসের, নূর ইসলামসহ পরিবারের স্বজনরা জানান, চাকুরি নয়,আগে বিচার চাই ওই দোষী এসিল্যান্ড, ইউএনও এবং ডিসি’র।
এদিকে সেই আলোচিত এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামসহ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ।

এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামের বাড়ির গৃহপরিচারিকা ও তার স্বামী নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তারা নির্যাতনের শিকার হয়ে ৪ মাস কাজ করার পর স্বামী-স্ত্রী কাজ বাদ দিয়েছেন।দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী রেনু বেগম এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামের বাসায় গৃহ পরিচারিকার কাজ করতেন। স্বামী-স্ত্রী ৪ মাস কাজ করলেও তারা কোন পারিশ্রমিক পাননি বলে অভিযোগ করেন। উপরন্ত সব সময় মার ডাং করতেন।

আব্দুস সামাদ অভিযোগ করেছেন, আমাদের লোভ-লালসা দেখিয়ে কাজে যোগদান করালেও শুধু নির্য়াতন করতো এসি ল্যান্ড আরিফুল ইসলামের স্ত্রী তাসমিন সুলতানা ম্যাডাম। এসি ল্যান্ডের একমাত্র দেড় বছরের সন্তান হামিমের দেখাশুনা করতেন তারা। এসিল্যান্ডের বাড়ি বগুড়ার চার মাথায় ও তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানার বাড়ি চাপাই নবাব গজ্ঞে।

রেনু বেগম জানায়, দিনাজপুর শহরে ৩ শতক খাস জমি দেয়ার জন্য গরু-ছাগল বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা এসি ল্যান্ডের স্ত্রী সুলতানা ম্যাডাম কে দিয়েছেন। এ সময় স্মার্ট কার্ড ও ছবি দিয়েছিলেন। কিন্তু খাস জমি পাননি। ঠিক মত খাওয়ার না দেয়ার অভিযোগ করেন রেনু বেগম। স্বামী-স্ত্রী দুজন কে দিয়ে বাড়ির কাপড়-চোপড় ধোয়া-রান্না-বান্না সহ সব কাজ করিয়ে নিতেন ম্যাডাম তাসমিন সুলতানা। অব্দুস সামাদ এসি ল্যান্ড অফিসে পিয়ন পদে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ কাজ করে আসছিলেন। এসি ল্যান্ড তাকে জোর করে বাড়ির কাজে নিয়োজিত করেন। তবে তার চাকুরীর নিয়োগ ছিলো না। বর্তমানে অব্দুস সামাদ পরিবার নিয়ে দিশেহারা।

এ ব্যপারে এসিল্যান্ড আরিফুই ইসলাম’ কোন বক্তব্য দেননি।

সেই মুক্তিযোদ্ধার ঘটনায় স্থানীয় জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে দিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিনদিনের ম্েয তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার কথা বললেও তা ফাইল বন্দি রয়েছে। তবে, রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের গঠন করা তদন্ত কমিটি’র প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো.জাকির হোসেন সেই আলোচিত সদর এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গোপনীয় সহকারী কমিশনার মহসেন উদ্দিনকে প্রত্যাহার করেছেন। তবে, জেলা প্রশাসক মো.মাহমুদুল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সেই আলোচিত মুক্তিযোদ্ধার চাকরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত ছেলে নুর ইসলাম নেশাগ্রস্থ।

প্রয়াত সেই আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবরে পুস্প মাল্য অর্পন, জিয়ারত ও তাঁর স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন,জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি এবং রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে.এম.তারিকুল ইসলাম। এ সময় বিপুল সংখ্যক মানষের সমাগম ঘটে সেখানে। জেলা প্রশাসক মো.মাহমুদুল আলম মাহমুদুর রহমানকে সেখানে দেখা গেলেও তাকে খুবই বিমূর্ষ দেখায়।

সেখানে হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাঁদের সন্তানদের সম্মান ক্ষুন্ন হয় এ সরকার তা প্রত্যাশা করেন না। জাতিরজরক বঙ্গবন্ধু শেখ মুহিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু ভাতা নয়,সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন। হয়তো ইসমাইল হোসেন এক প্রতিবাদি প্রতীক হয়ে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন। তবে এমন ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এমনটা সকলের প্রত্যাশা করা উচিত।

স্বজনদের সাথে কথা বলার সময় হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি নুর ইসলামকে চাকুরি দেয়ার কথা ঘোষণা দেন।

(এসএএস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০১৯)