স্টাফ রিপোর্টার : উপাচার্যের (ভিসি) পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার থেকে তেজগাঁও ক্যাম্পাসের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) প্রশাসনিক ভবন ও রিডিং রুমসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্লাজার উপর গোল হয়ে বসে স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ‘এই ভিসি চাই না, দাবি মোদের একটাই এ ভিসির পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার ভিসি তুই গদি ছাড়’, ‘অবৈধ ভিসি মানি না মানবো না’ এমন বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল শীর্ষ মানের বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ক্ষমতার জোরে অবৈধভাবে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে বসেছেন অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলম। শুধু তাই নয়, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদ দখল করেছেন তিনি। গত রোববার আমাদের সমাবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও ভিসির কারণে শিক্ষামন্ত্রী তা বর্জন করেছেন। অবৈধ ভিসিকে সরাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুর থেকে আন্দোলন শুরু করি। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো এ আন্দোলন চলছে।

তারা জানান, স্বপ্রণোদনায় কাজী শরিফুল আলম ভিসি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অকারণে সেমিস্টার ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে চাইলে ভিসি তা অনুমোদন দেন না। এই ভিসির জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেয়া হয়। এসবের প্রতিবাদে তারা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. ভিসিকে প্রশাসনিক সব পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তার দায়িত্বকালে নেয়া সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

২. বর্তমান ভিসির জন্য যে ১০ সিনিয়র ফ্যাকাল্টিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে তাদেরকে স্ব সম্মানে ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩. সেমিস্টার বাবদ নেয়া অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে তা অথরিটিকে জানাতে হবে।

৪. ক্লিয়ারেন্সে টাকা দেয়ার নতুন আরোপিত নিয়ম বাতিল ও ক্যারি ক্লিয়ারেন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩ করতে হবে।

৫. ইউনিভার্সিটিতে এলাইমনাই অ্যাসেসিয়েশন গঠনে সম্মতি দিতে হবে।

৬. সেমিস্টারে এস্টাবলিস্টমেন্ট এবং ডেভোলপমেন্ট ফি নেয়া হলেও তার সব সুবিধা দেয়া হয় না, এ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ল্যাব সুবিধা, ক্লাস রুম উন্নয়ন, ওয়াশ রুম সংস্কার, নিরাপত্তা জোরদার, ক্যান্টিনের খাবার ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত, যাতায়াত ব্যবস্থা ও গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গঠনের অনুমতি দিতে হবে। যেখানে প্রতিনিধিত্ব করবে বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

৮. নতুন করে একাডেমিন ক্যালেন্ডার বর্তমান সেমেস্টার রুটিনের আদলেই তৈরি করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৯. সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডকে ক্যাম্পাসে সহজ ও সাবলীল করার লক্ষ্যে র‌্যাগ ফেস্টসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায়ে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, রিডিং রুম, ক্যান্টিন, লাইব্রেরিতে তালা ঝুলানো হয়েছে। দাবি আদায় না হলে ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হবে।

তার বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারা সকাল ১১টা থেকে একাধারে বিক্ষোভ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিকাল ৫টার পর বুধবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তারা।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০১৯)