স্টাফ রিপোর্টার : মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আবাসস্থল ভাসানচরে থাকছে কেনাকাটার জন্য সুপারশ। থাকছে দুইটি হাসপাতাল ও চারটি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা সুবিধা।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পঞ্চম বৈঠকে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর পরিচালক কমডোর এ এ মামুন চৌধুরী বিএন স্বাক্ষরিত এক কার্যপত্র তুলে ধরা হয়।

কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রকল্পের ক্লাস্টার হাউজগুলোর ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১২০টি শেল্টার স্টেশনের মধ্যে সব শেল্টারের স্টিল ইরেকশন শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯২টি শেল্টার স্টেশনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি শেল্টারে দুইটি হাসপাতাল, চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এইচএডি) অর্থায়নে গত ১৫ সেপ্টেম্বর হতে এর কাজ শুরু করা হয়েছে, যা চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া কয়েকটি শেল্টার পরিবর্তন করে দুইটি স্কুল, তিনটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য, একটি ইউএন প্রতিনিধিদের জন্য, একটি বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধিদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া একটি সুপারশপ হচ্ছে।’

কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘দ্বীপটির নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য ৯ ফুট উচ্চতার ১২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ থেকে নিরাপত্তার জন্য ২.১ কিলোমিটার স্ক্রিন ওয়াটারের মাধ্যমে শোর প্রকেটশনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। দ্বীপটিতে বসবাসরত নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে আনুমানিক চল্লিশ কিলোমিটার ছোট-বড় অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে।’

‘দ্বীপটিতে বসবাসরত জনবলের নিরাপত্তা জরুরি স্থানান্তরের জন্য চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড কর্তৃক নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি এলসিইউয়ের গ্রহণযোগ্যতা শেষ হয়েছে এবং অপর এলসিইউটি আগামী নভেম্বর মাসে শেষ হবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া ইতোমধ্যে দুইটি এলসিইউ ভাসানচরে মোতায়েনের জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। ৮টি হাইস্পিড বোর্ড নির্মাণ শেষে বর্তমানে চট্টগ্রাম অবস্থান করছে। এ ছাড়া দ্বীপটিতে মালামাল ও জনবল চলাচলের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় পন্টুন নির্মাণ ও বোট ল্যান্ডিং সাইট তৈরির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। জনগণের জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কাজসহ মালামাল বহনের জন্য দুইটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে।’

দ্বীপটিতে ত্রাণসামগ্রী (খাদ্য ও অন্যান্য আইটেম) সংরক্ষণের জন্য এক লাখ রোহিঙ্গাদের আনুমানিক তিন মাসের খাবার সংরক্ষণের জন্য চারটি ওয়্যারহাউজ নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় কার্যপত্রে।

কার্যপত্রে আরও বলা হয়, ‘দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য বাসভবনের মধ্যে সিকিউরিটি হাউজের কাজ শতভাগ এবং সিকিউরিটি হাউস-২ এর কাজ নিরানব্বই ভাগ এবং সিকিউরিটি হাউস-৩ এর কাজ ৮৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য ভাসানচরে একটি গ্রামীণফোন এবং একটি রবি মোবাইল বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন-বিটিএস স্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকাধীন টেলিটক নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।’

‘এক মেগাওয়াট হাইব্রিড সোলার প্যানেল, প্রয়োজনীয় পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন এবং একটি মেগাওয়াট জেনারেটর এবং দুইটি ৫০০ কিলোওয়াট সম্পন্ন ডিজেল জেনারেটর স্থাপনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে, যা পরীক্ষামূলক টেস্ট এবং ট্রায়াল করা হয়েছে।’

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, বৈঠকে ভাসানচর আবাসন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ প্রকল্পের ওপর একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পটিতে এক লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিটি দ্রুত রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানের সুপারিশ করে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত কমিটির মো. নাসির উদ্দিন, মো. মহিববুর রহমান এবং নাহিদ ইজাহার খান। এ ছাড়া বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সফিকুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০১৯)