স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : জামালপুরের ডিসির পর এবার নারী কেলেঙ্কারী’র অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে। ভিডিও বার্তায় এক নারী দাবি করেছেন, পরিচয় হওয়ার পর ডিসি মাহমুদুল আলম নানা প্রলোভনে ফেলে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। সেই ফাঁদে পা দিয়ে সংসার ভেঙেছে তার। ঘটনা জানাজানি করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওই নারীর।

ভাইরাল ভিডিওতিতে ওই নারী দাবি করে, জামালপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারী ফাঁস হওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। ঘটনা জানাজানি করলে, হত্যার হুমকিও দেয়া হয় তাকে। এই তথ্য প্রযুক্তি আর ডিজিটাল যুগে ডিসি এবং তার ফোন যাচাই করলে সব বেরিয়ে পড়বে বলেও ভিডিও বার্তায় দাবি করে ওই নারী। এক পর্যায়ে তাকে বাঁচাতে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র দৃষ্টি কামনা করে কেঁদেও ফেলেন।

কিন্তু, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম বলছেন, এঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করেছেন। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা ওই নারী’র ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার কয়েকদিন পর আবারও ওই নারীর আরো একটি পাল্টা ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি জেলা প্রশাসককে নির্দোষ দাবি করে তার স্বামী সেলিমের চাপের মুখে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে ওই ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন।

তাকে নিয়ে দিনাজপুরের ডিসির বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী’র ঘটনার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর আজ বুধবার বিকেলে ওই নারী’র আরো একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি এঘটনার জন্য আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান জিয়াকে দায়ী করেছেন। বলেছেন,তাকে চাপে ফেলে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে ওই ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে তিনি ছেড়েছিলেন।

দিনাজপুর শহরের ওই নারী’র বাড়ী। তার পিতা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দিনাজপুরের দক্ষিণ কোতয়ালীস্থ একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের শিক্ষকতা। তার ৩টি সন্তানও রয়েছে। তার সাথে যোগযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে,তার মা সংবাদ প্রকাশের আগে সাংবাদিকদের অভিযোগ করলেও এখন আর এ বিষয়ে কথা বলছে চাইছেন না।

প্রায় দেড়মাস আগে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে ভাইরাল হওয়া ভিডিও বার্তায় ওই নারী অভিযোগ করেন, তিন কন্যা ও স্বামীর সাথে সংসার ভালই চলছিল, গভীর রাতে জেলা প্রশাসক মোবাইল করা নিয়ে শিক্ষিকার সাথে স্বামীর মনোমালিন্য হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে শিক্ষিকাকে জেলা প্রশাসক তার স্বামীকে তালাক দিতে বলেন এবং সকল আইনী সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। জেলা প্রশাসকের কথা অনুযায়ী শিক্ষিকা তার স্বামীকে তালাক দেন। শিক্ষিকার মানষিক এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসক তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। শিক্ষিকা তার ভিডিও বক্তব্যে অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসক বেশী রাতে তার স্মার্ট ফোনে ম্যাসেঞ্জারে কল দিতেন এবং নানা প্রকারে আপত্তিজনক ও অশালীন কথা বলতেন এবং ছবি দেখাতেন।

অন্যদিকে মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের আগে শিক্ষিকা নারী’র মা ও মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলীর স্ত্রী সীমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলের চাকুরী খেয়ে তার পেটে লাথি মেরছে। এক মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের সংসার ভাঙ্গলো। এই বিচার দিনাজপুরবাসীর কাছে দিলাম। জেলা প্রশাসকের এক দালাল যে ভাবে হুমকি-ধুমকি দিয়ে আসছে তাতে আমি আমার মেয়ের চাকুরী নিয়েও ভয়ের মধ্যে আছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত রয়েছে।

সচেতন মহল বলছেন, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম এর বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী’র ভিডিও বার্তা
যদি মিথ্যা হয়, তবে কেন ওই নারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলেন না তিনি। ডিসি’র বিরুদ্ধে ঘটনা সাজানো বলে তার স্বামী এবং ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পর্বতীতে অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পৃথকভাবে বিলম্বে যে দুটো ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন। তা সঠিক হলে একজন জেলার অভিভাবক জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো ষড়যন্ত্রকারী ওই নারী’র স্বামী সেলিম বা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়ার বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হলোনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে ছেলের চাকুরিচুত্য’র প্রতিবাদে দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধ ইসমাইল হোসেন অভিমান করে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রত্যাখানের ঘটনায় সেই আলোচিত এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার মহসেন উদ্দিনকে প্রত্যাহার পর ডিসি মাহমুদুল আলমকে প্রত্যাহারের দাবীতে সোমবার ডিসি অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে,মুক্তিযোদ্ধারা।

ডিসি’র বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী অভিযোগের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দিনাজপুরবাসী।

(এস/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০১৯)