শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষনার প্রথম বার্ষিকী আগামীকাল। গত বছরের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ৬টি বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করেন। এলিট ফোর্স র‌্যাব সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনার প্রথম বার্ষিকী পালনে শুক্রবার সকালে বাগেরহাট স্টেডিয়ামে আয়োজন করেছে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর গোটা সুন্দরবন বনদস্যু মুক্ত হয়। এসব বনদস্যু বাহিনীগুলো আত্মসমর্পণের পর এখন সুন্দরবনের বাতাসে নেই বারুদের গন্ধ। শোনা যায়না গুলির শব্দ।

সুন্দরবনে এক সময়ের সক্রিয় আত্মসমর্পন করা ৩২টি বাহিনীর মধ্যে সর্বশেষ ৫টি বাহিনীর ৭০ জন বনদস্যুর আত্মসর্মপনের মধ্যস্থতায় ছিলো, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন।

সুন্দরবন দস্যুমুক্তির প্রথম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র‌্যাবের ডিজি মো. বেনজীর আহম্মদ, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামছুল হক টুকুসহ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যগন উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব। সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনার প্রথম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ বনদস্যুদের দেয়া হবে আর্থিক অনুদান ও উপহার সামগ্রী।

এক সময়ে সুন্দরবন দাঁপিয়ে বেড়ানো দন্ডমুন্ডে কর্তা বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম র‌্যাবের আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণে এগিয়ে আসে মাস্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারসহ ৯ বনদস্যু। ২০১৫ সালের ৩১ মে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে তার আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ত্রেমে বনদস্যু মানজার বাহিনী, মজিদ বাহিনী, বড় ভাই বাহিনী, ভাই-ভাই বাহিনী, সুমন বাহিনী, দাদা ভাই বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আমির বাহিনী, মুন্না বাহিনী , ছোট শামছু বাহিনী, মানজু বাহিনী, সূর্য বাহিনীসহ ২৬টি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে।

সর্বশেষ গত বছরের ১ নভেম্বর বাগেরহাট স্টেডিয়ামে সত্তার বাহিনী, শরিফ বাহিনী, সিদ্দিক বাহিনী, আল-আমিন বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও তৈয়ব বাহিনীর বনদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকৃত ৩২টি বাহিনী প্রধানসহ সর্বমোট ৩২৮ বনদস্যু সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তারা র‌্যাবের হাতে তুলে দেয় ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৩ হাজর ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত বছরের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর ম্যানগ্রোভ এই বনে বইবে শান্তির সুবাতাস। বনদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই বনের জীববৈচিত্র্য। বন্ধ হয়েছে জেলে-বনজীবীদের মুক্তিপনের দাবীতে অপহরণ ও দেশী-বিদেশি চোরাকারবারীদের চাহিদা মতো হরিণ, বাঘ-কুমির শিকার ও পাচার। পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত জলাভূমির হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার- কুমির ও কিংকোবরাও হাফছেড়ে বাচেঁ।

(এসএকে/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০১৯)