অমল তালুকদার,পাথরঘাটা (বরগুনা) : মা ইলিশ শিকারের বাঁধা কেটে গেছে। আবার ফিরে এসেছে জেলেপল্লীর চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য। শুরু হয়েছে ইলিশ শিকার। প্রতিবছর প্রজননের ২২ দিন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে। এই সময়টুকু জেলেজীবনে অনেকটা দুর্বিসহ বলে মনে করেন তারা।

২২ দিন পর আবার উপকূলীয় মৎস্যবন্দর সহ সকল মৎস্যবাজার সরব হয়ে উঠেছে। অকর্ম-অলস সময় ঝেড়েফেলে আবার কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। ৩১ অক্টোবরটা ভোরেই বরগুনার পাথরঘাটা বজারে বড় সাইজের ইলিশ চোখে পরেছে। দামও বেশ চড়া। ১ কেজির উপরে প্রতিটি ইলিশ দেড় থেকে দু'হাজার টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনেই ট্রলারে তেল, বরফ, রসদ তুলে সবাই প্রস্তুতি নেন সাগরে যাওয়ার। পাথরঘাটা বিএফডিসি এবং ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময় ছিল বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ১২টা পর্যন্ত। আজ (৩১/১০/১৯)সূর্য ওঠার আগেই পাথরঘাটার জেলেরা সমুদ্রে নামছেন বলে জানা গেছে।

নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনেই ট্রলারে তেল, বরফ, রসদ তুলে সবাই প্রস্তুতি নেন সাগরে যাওয়ার। পাথরঘাটা বিএফডিসি এবং পৌর শহরের প্রধান বাজারে মুদি-মনোহারী দোকানে জেলেদের বাজার সদাই করার ভিড় লক্ষ করা গেছে।

ফারুক মাঝি, ছালাম মাঝি, জাকারিয়া ইস্কেন্দার বয়াতী জানান, অবরোধ শুরুর আগের দিন ৮ অক্টোবর সাগর থেকে ফিরে আসেন তারা। এই ২২ দিন ট্রলার ও জাল মেরামতের পাশাপাশি পরিবারের সাথেই কাটিয়েছেন তারা। তাদের প্রত্যেকের ট্রলারে মোট ১৫ থেকে ২০ জন জেলে। সবাই সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে গতকালই মহাজনের আড়তে ফিরেছেন।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম আকন জানান, অবরোধের সময়ের মধ্যে জাল, ট্রলার মেরামত করে সাগরে যাওয়ার উপযুক্ত করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার অবরোধের শেষ দিন। মধ্যরাতেই সাগরের উদ্দেশে রওনা হবে উপকূলের ট্রলারগুলো।

বরগুনা জেলে মৎস্যজীবী টলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বিগত বছরের মতো এবারেও বরগুনার জেলেরা সরকারের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কোনো জেলেকে নদী-সাগরে জাল ফেলতে দেখা যায়নি।

তিনি আরো জানান, ইলিশ প্রজনন ঘটাতে সরকার সফল হয়েছে, এখন জাটকা রক্ষা করতে পারলে আগামীতে ইলিশ আরো কয়েক গুণ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। তবে বরাবরের মতো এ নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আক্ষেপ করেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অসাধু জেলেদের ইলিশ শিকারের খবর পাওয়া গেলেও উপকূলীয় বরগুনা তার ব্যতিক্রম। এখানকার কোনো জেলে নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদী-সাগরে জাল ফেলেননি। জেলে, মহাজনসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় এবারের অবরোধ সফল হয়েছে।

চলতি বছরের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে দ্বিতীয়বারের মতো ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ।

(এটি/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০১৯)