চৌধুরী আবদুল হান্নান


আমাদের মেয়েরা চোখের সামনে নিপীড়িত হচ্ছে, নরক যন্ত্রনায় বসবাস আমাদের। নারীর প্রতি নিষ্ঠুর লাঞ্চনার স্মৃতি নিয়ে আমরা ঘুমাতে যাই, সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরে আরও ভয়ংকর ঘটনা দেখে দিন শুরু করি।

কেউ কেউ আবার নিজেই মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে ধর্মের লেবাসে পরীক্ষায় সুযোগ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রী ধর্ষণের “ফুল বাগিচা” তৈরী করে নিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে ধর্ষিতাকে শপথ করানো হয়।

আমাদের মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়, পথে পথে ওঁৎ পেতে আছে ভয়ংকর সব নেকড়ে। ধর্ষিত হয়েও মেয়েরা বিচার চাইতে ভয় পায়; তাতে দ্বিতীয়বার ধর্ষণের মত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।

এ চিত্র কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আছে। কঠিন আইনও প্রনয়ন করেছে তারা। ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা রাজ্যে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ধর্ষককে ইনজেকশন পুশ করে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নপুংসক করে দেয়া হয়।

আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থামছে না, এর কী কোনো প্রতিকার নেই? নুসরাত হত্যা মামলার সকল পরিনতি আমাদের অসাধারণ এক বার্তা দিলো, আশার আলো দেখালো।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নুসরাত হত্যা মামলার নির্ভুল তদন্তের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে আন্তরিকতার সাথে পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রেখে চার্জশিট দাখিল করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছেন।

নারীর প্রতি নৃশংসতার মতো একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে এ মামলার সকল অগ্রগতির নজির একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এ জাতীয় সকল মামলার এভাবে দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর হলে সমাজ থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে, সে প্রত্যাশা করাই যায়। মানুষের যখন আইনের প্রতি, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট তেরী হয়, তখন আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবনতা প্রবল হয় এবং সে কারণেই পুলিশের হাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ আসামি নিহত হলে মানুষ স্বস্তি পায়, খুশি হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আত্মত্যাগ অমরত্ব দিয়েছে নুসরাতকে। শুধু তাই নয়, ওর অমরত্ব আমাদের পথ দেখিয়েছে।

এখন আমাদের কাজ এ পথ ধরেই এগিয়ে যাওয়া। পিআইবি প্রধানের নেতৃত্বে ডুলিশ সদস্যগণ শুরু থেকেই আন্তরিকতা, দক্ষতার সাথে কাজ করে সফলতার দিকে নিয়ে গেছেন, তাতে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। অর্থ পুরস্কারই কেবল পুরস্কার নয়, বিভাগীয় প্রশংসাও বড় পুরস্কার। তারা কীভাবে সফল হলেন তা বার বার প্রচার করতে হবে, টিভিতে, পত্রিকায়, জনসমাবেশে। তাতে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হবে। অপরদিকে নারী নির্যাতনকারীদের পরিনতিও দেখাতে হবে বার বার।

সরকারের একার দায়িত্ব নয়, সমাজের সকলস্তরের মানুষের দায়িত্ব নিতে হবে, এ ব্যাধি নির্মূলে। সদিচ্ছা থাকলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূও হবে, সফলতা আসবেই।


লেখক : সাবেক ব্যাংকার।