বিনোদন ডেস্ক : বর্ণাঢ্য রঙের ছটায় তার সৃষ্টির মতোই জীবন্ত হয়ে উঠছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাকগ্রাউন্ডে ভেসে উঠছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাতীয় প্রতীক ও দর্শনীয় স্থাপনাগুলো। আর এরই সামনে মঞ্চে বসে তার ইউরোপ ভ্রমণের সময়কার সৃৃষ্টিগুলো তুলে ধরছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিবেদিত শিল্পীরা।

সুুরের সাথে পাঠ আর আবৃত্তির মিশেলে অনন্য হয়ে উঠছিলেন কবিগুরু। আকণ্ঠ রবির সুধা পান করে শিল্পীরাও বাঙালির মানসপটের ভালোবাসার কবিকে মূর্ত করে তুলছিলেন। বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছিলেন বলে রবীন্দ্রনাথে নিবেদিতরা প্রিয় কবিকে সমহিমায় তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন।

জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের বিশাল ক্যানভাসে সঙ্গীত সংগঠন ‘উত্তরায়ণর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের প্রয়াসে ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক গীতিআলেখ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সেখানে কবিগুরুকে রঙিন করে তুলে ধরেছেন উত্তরায়ণের শিল্পীরা।

পৃথিবীর যে প্রান্তেই গিয়েছেন সেখানেই বাংলাকে সমহিমায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কবিগুরু। তার চেতনা জাগানিয়া বাণী ও সুরে বাঙালি উদ্দীপ্ত হয়। যার কারণে গতকাল হেমন্তের সন্ধ্যার এই আসরে গানে ও কথায় শিল্পীরা উপস্থাপন করেছেন বাঙালি ও বাংলার প্রতি রবীন্দ্রনাথের গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসার কথা।

কবির ইউরোপ ভ্রমণের সময় রচিত ১৯টি গান দিয়ে সাজানো হয়েছে এই আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘প্রথম যুগের উদয় দিগঙ্গনে’ গানটি সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে আয়োজক সংগঠনের শিল্পীরা। এরপর রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লিলি ইসলামের নেতৃত্বে একে একে ১৯টি গান পরিবেশন করেন ‘উত্তরায়ন’-এর শিল্পীরা।

এরমধ্যে ১১টি সমবেত কণ্ঠে আর ৭টি একক ও একটি ছিল দ্বৈত কণ্ঠের পরিবেশনা। গানে গানে তব বন্ধন, সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি, আমার মুক্তি আলোয়, মধুর তোমার শেষ, তোমারি নাম বলব, কার চোখের চাওয়ার, আকাশে তোর তেমনি আছে ছুটি, কোথায় ফিরিস পরম শেষের, অরূপ তোমার বাণী, আপনি আমার কোনখানে, দিনের বেলায় বাঁশী, যা পেয়েছি প্রথম দিনে, তুমি উষার সোনার বিন্দু, প্রাণে খুশির তুফান, তার হাতে ছিল, ক্ষমা করো মোরে সখী, সঙ্কোচের বিহŸলতা এবং নাই নাই ভয়’ চেতনা জাগানিয়া এমন কথা ও সুরে সমগ্র মিলনায়তনে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

শিল্পীরা সুরের সমুদ্রের ঢেউ তোলেন আর সঙ্গীতানুরাগীরা বিমোহিত হয়ে অধীর ধৈর্য্যরে সাথে উপভোগ করেন রাবীন্দ্রিক এই আয়োজন। প্রতিটি পরিবেশনার আগে সে গানটির রচনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন অনুষ্ঠানের পরিচালক লিলি ইসলাম।

এছাড়া গানের ফাঁকে নতুন মাত্রা যোগ করে ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদের পাঠ ও আবৃত্তি। লিলি ইসলামের পরিকল্পনা, গবেষণা ও পরিচালনায় আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইশরাত জাহান বিথি, নাহিদ পারভীন, রতন মজুমদার, টিংকু কুমার শীল, মৌমিতা পাল, সাইফুল ইসলাম, অভিজিৎ দে, নুসরাত জাহান সাথী, শিমু দেসহ উত্তরায়ণ-এর ২৫ জন সদস্য।

উত্তরায়ণ-এর আয়োজনে ‘উইরোপে রবীন্দ্রনাথ’ অনুষ্ঠানটিতে সহযোগিতা করে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৩, ২০১৯)