নরসিংদী প্রতিনিধি : সকল নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতাকে ছাপিয়ে এক জোড়া কানের দুলের জন্য দুর্বৃত্তদের হাতে প্রান হাড়াতে হয়েছে ৬ বছরের শিশু মীমকে। সদা হাস্যজ্জল আর মায়াবি চেহেরার অধিকারী হওয়া শুধু বাবা-মার কাছে নয়, পুরো গ্রামের মানুষের কাছেই ছিল অত্যন্ত আদরের। কিন্তু দুর্বৃত্তদের কাছে শিশুটির চেয়ে কানের দুলের মূল্য যে আনেক বেশি সেটি বুঝতে পারেনি নিহত মীমের পরিবার। তাইতো শিশুটি মা-বাবা’র আহাজারী। কেন মেয়েকে সোনার দুল পড়িয়েছিলাম। সোনার দুল না পড়ালে মেয়েটিকে হয়তো দুবৃত্তদের হাতে মরতে হতো না।

রবিবার ভোরে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া গ্রামে একটি মুরগীর খামার থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিশু সুমাইয়া আক্তার মীম (৬) একই গ্রামের ইসমাইল ভূইয়ার মেয়ে এবং স্থানীয় গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে পলাশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে ঘটনার সাথে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, অটোরিক্সা চালক ইসমাইল মিয়ার ৩ ছেলে ও এক মেয়ে। সবার ছোট মীম প্রতিদিনের মত গত শনিবার বিকালে খেলাধুলা করতে বাড়ির পাশের খেলার মাঠে যায়। সন্ধ্যায় খেলার মাঠ থেকে অন্যরা ফিরে এলেও মীম বাড়িতে ফেরেনি। উৎকন্ঠিত পরিবারের লোকজন আশপাশের বাড়িতে ও পুকুরে খোঁজ করেও কোন সন্ধান পায়নি। এক পর্যায়ে রবিবার ভোরে বাড়ির অদূরে আবদুল বাতেন ভূইয়ার পরিত্যাক্ত মুরগীর খামারে তাঁর লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। লাশটি অর্ধেক মাটিতে পুতে রাখা হয়েছিল এবং শুকনো পাতা ও ডাল পালা দিয়ে আংশিক ঢেকে রাখা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

সরেজমিনে নিহত মীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন শোকার্ত পরিবারের লোকজনকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোন সান্তনাই সন্তান হারানো মা রহিমা বেগমের আহাজারি থামাতে পারছেনা। মায়ের এমন আহাজারি দেখে উপস্থিত লোকজন চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি।
মেয়ে মীমের ছবিকে আগলে ধরে মা রহিমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার মা কেমনে চাইয়া রইছে। কত মানুষ আইতাছে কেউতো আমার মাইয়্যারে নিইয়্যা আইতাছেনা। ভাইরে আমার বুকের ধনরে ফিরাইয়্যা দে..।

বাবা ইসমাইল ভূইয়া বলেন, আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। তবে তার কানে ৩ আনা সোনার এক জোড়া দুল ছিল। যা পরে পাওয়া যায়নি। কি কারণে কারা আমার নিষ্পাপ মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে তা বুঝতে পারছিনা। এমন ছোট্ট মেয়েটাকে মারতে তাদের হাত একটুও কাপলনা ?

পলাশ থানার ওসি শাহাদাত হোসেন বলেন, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে অথবা গলাটিপে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত শিশুর দুই কানে সোনার দুল ছিল। কিন্তু লাশ উদ্ধারের সময় কানে দুল পাওয়া যায়নি। তাই প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে নেশাগ্রস্থ কেই কানের দুলের জন্য তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চালাচ্ছে।

(এলবি/অ/আগস্ট ০৩, ২০১৪)