রংপুর প্রতিনিধি : কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকালীণ সময়ে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন মাঠে কোন ধরণের মাসব্যাপী মেলা না করার দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন-সমাবেশ করেছে অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ। 

সোমবার সকাল ১১ টায় সচেতন প্রেসক্লাব চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশে গত ২ নভেম্বর থেকে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে, ১৭ নভেম্বর শুরু হবে পিইসি পরীক্ষা। এছাড়াও বিদ্যালয়সমুহের সমাপনী পরীক্ষা ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্লাস ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবেই পরীক্ষার প্রস্তুতির বিঘ্ন ঘটবে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্ন করে এ ধরণের আয়োজন কোন সচেতন নাগরিক কিংবা অভিভাবক মেনে নিতে পারে না। এ সময়ে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। কারণ এই মেলা শুধু নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, নগর জুড়েই এর প্রভাব পড়বে। এর আকর্ষণে লেখাপড়া ছেড়ে অনেক কিশোর-কিশোরীরা মেলা প্রাঙ্গণে ভীড় করবে।

ফলে এই সময়টি কোনভাবেই অনুকুল নয়। তাছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ ব্যবহার করে এ ধরণের মেলা আয়োজন না করার বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি হুমকির মধ্যে রেখে এই সময়ে মেলা আয়োজনে আমরা উদ্বিগ্ন ও শংকিত। উল্লিখিত পরীক্ষা পরবর্তী সময়ে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে গঠনমূলক আয়োজনে মেলা হলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

নারী পুলিশ কল্যাণ সমিতির সহযোগীতায় এবং মন্তা ডেকোরেটর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর আয়োজনে আগামী ১০ নভেম্বর' থেকে স্থানীয় পুলিশ লাইন্স স্কুল সংলগ্ন মাঠে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে আয়োজক কর্তৃপক্ষ মাঠের প্রায় অর্ধেক অংশে বেষ্টনী তৈরী করে ষ্টল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছে। গত ২৮ অক্টোবর রংপুরের পুলিশ সুপার বরাবর পরীক্ষাকালীণ সময়ে মেলা না করার জন্য আমরা স্মারকলিপি প্রদান করি। কিন্তু জেলা পুলিশ প্রশাসন সচেতন অভিভাবক ও নাগরিকদের মতামতকে উপেক্ষা করে মেলা অনুষ্ঠানে অনড়।

শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক ও রাজনীতিবীদ পলাশ কান্তি নাগের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন চাঁদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অধ্যাপক মলয় কিশোর ভট্রাচার্য, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম, প্রজন্ম একাত্তর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবদাস ঘোষ দেবু, রংপুর পদাতিকের নাসির উদ্দিন সুমন, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব সুভাষ রায়, শ্রমিক নেতা রেদওয়ান ফেরদৌস প্রমূখ।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মেলা চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য। আবহমান বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপূরক মেলা অনুষ্ঠান অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। নাগরিক জীবনের কর্ম ব্যস্ততার মাঝে চিত্ত বিনোদনের মত এ ধরণের আয়োজনের নিশ্চয়ই গুরুত্ব রয়েছে। যদিও কতিপয় মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কর্পোরেট সংস্কৃতির আদলে মেলার আয়োজনে করে। যা আমাদের সুষ্ঠু ধারার সংস্কৃতি ও বিনোদনের পথে মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।

(এমএস/এসপি/নভেম্বর ০৪, ২০১৯)