স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারের চার পৌরসভা এবং ৭১ ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ওই এলাকায় জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, নির্বাচন কমিশন, রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু), চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদেরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট পক্ষের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম।

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর স্থানীয় একটি দৈনিকের ’২০ মাস ধরে বন্ধ জন্মনিবন্ধন’ শীর্ষক প্রতিবেদন সংযুক্ত করে কক্সবাজারের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা ওই রিট করেন। রিটে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় চালুর নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রুল জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে আসার পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ওই সব এলাকায় শিশুর জন্মনিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শেষ হয়েছে, কক্সবাজারের বাসিন্দাদের ভোগান্তি এখনো শেষ হয়নি বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিটটি করা হয়। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে রিটটি করা হয়।

আবেদনে স্থানীয় সরকার সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেল, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

নাসরিন সিদ্দিকা লিনার মতে, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভসহ পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য কক্সবজারের চারটি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে, কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, বিদ্যালয়ে ভর্তি, পাসপোর্ট গ্রহণ, ভোটার তালিকায় নিজ নাম অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

গত মে মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, কক্সবাজারের চার পৌরসভাসহ আট উপজেলায় দীর্ঘ ২০ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। দীর্ঘসময় ধরে স্থানীয়রা জন্মনিবন্ধন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করলেও বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে অনলাইনের বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধন কপি সংযোজন করতে হওয়ায় চরম বিপাকে পড়ছেন নতুন ভোটার হতে আগ্রহীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের সমস্যার শেষ নেই। তার ওপর দীর্ঘ ২০ মাস ধরে জাতীয় সার্ভার বন্ধ করে রাখা খুবই দুঃখজনক।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০১৯)