নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিডির কার্ড দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব আলী মন্ডল ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি। ভুক্তভোগীরা কার্ড পাওয়ার আসায় সুদের ওপর টাকা নিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু কার্ড না হওয়ায় এক বছরেও টাকা ফেরত পাননি তারা। টাকা ফেরত দেয়াসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ওই চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবী জানান ভুক্তভোগীরা। 

জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব আলী মন্ডল শারীরিক ভাবে অসুস্থ। এজন্য তিনি মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। ইউনিয়ন পরিষদ ও পরিষদের বিভিন্ন এলাকায় তার তৃতীয় ছেলে জুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে আসা যাওয়া করতেন। চেয়ারম্যানের ছেলে হওয়ার সুবাদে জুয়েল এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন।

চেয়ারম্যান অসহায় এলাকাবাসীদের বিভিন্ন কার্ড করে দেয়ার নামে ছেলের মাধ্যমে টাকা নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার অসহায় মানুষরা ভিজিডির কার্ড পাওয়ার আশায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুদের ওপর টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানের ছেলেকে দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্ড না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা হতাশ হয়ে পড়েন। টাকা ফেরতের জন্য বার বার চেয়ারম্যান ও তার ছেলের কাছে ধর্না দিলেও কোন লাভ হয়নি।

ইউনিয়নের পয়না গ্রামের খোরশেদের স্ত্রী সাবিনা বলেন, তার স্বামী একজন ভ্যান চালক। কষ্ট করে সংসার চলে। গত এক বছর আগে চেয়ারম্যানের ছেলে জুয়েল আমার বাড়িতে এসে ভিজিডির কার্ড করে দেয়া হবে বলে তার বাবার নাম করে টাকা দিতে বলেন। কয়েকদিন সময় নেয়ার পর সুদের ওপর সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে জুয়েলকে দেয়া হয়। পরিষদে যেদিন কার্ড দেয়া হয় সেদিন সবাই কার্ড পেলেও আমি পাইনি। পরে দুইদিন জুয়েলের বাড়িতে গেলেও দেখা করেনি।

এরপর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা করে দেননি। তিনি আরো বলেন, সাড়ে চার হাজার টাকায় এক বছরে ৫ হাজার ৪শ’ টাকা সুদ দিতে হয়েছে। হাঁস, মুরগি ও গোবরের কাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। কিন্তু কার্ড করতে দেয়া সেই টাকা আজও ফেরত পাইনি।

একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মাসুদা বেগম বলেন, তার স্বামী ইট ভাটিতে কাজ করেন। কার্ড করে দিবে বলে সুদের ওপর টাকা নিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টাকা জুয়েলকে দেয়া হয়। কার্ড হবে বলে বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু কার্ড পাইনি। টাকা ফেরত চাইলে ১০ দিন, ১৫ দিন সময় চায়। কিন্তু সময় মতো টাকা দেয়না। এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে সেই সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন আমার টাকা ফেরত চাই। সেইসাথে তাদের বিচার চাই।

একই গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ বিশ্বনাথের কাছ থেকে ৪ হাজার ১শ’ টাকা, বয়জ্যেষ্ঠ বিধবা রওশন আরার কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। তারা বলেন, চেয়ারম্যান মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না। এজন্য তার ছেলে জুয়েল মোটরসাইকেলে করে চেয়ারম্যানকে নিয়ে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। কার্ড করে দেয়া হবে বলে তার বাবার নাম করে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। চেয়ারম্যান তার ছেলেকে দিয়ে এসব করিয়ে নেন। আর বসে বসে টাকার ভাগ পান। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না।

নওগাঁ সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন গনমাধ্যমকে বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। এরপর অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনের দৃষ্টিতে যে ব্যবস্থা হয়, তা গ্রহন করা হবে।

(বিএম/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০১৯)