মানিক সরকার মানিক, রংপুর : সারাদেশেই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে চলছে ধূমপায়ীরা। এদের কারণে নগরীর চিড়িয়াখানা, সুরভী উদ্যানসহ মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর স্বাস্থ্যগত পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এতে করে নির্মল পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে আসা বিনোদন প্রেমিদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে। এসব স্থানে প্রতিনিয়তই আইন অমান্য করলেও সে সব ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক বিনোদনপ্রেমি।

একই সাথে ধূমপানের বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শিশুসহ সকলকে রক্ষা করতে মহানগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিনোদনপ্রেমিরা। নয়তো, অদূর ভবিষ্যতে যত্রতত্র ধূমপানের কারণে বিনোদন কেন্দ্রগুলো দর্শক শূন্য হয়ে পড়বে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

রংপুরে বিনোনদপ্রেমিদের বিনোদনের অন্যতম স্থানগুলো হলো, চিকলী পার্ক, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সুরভি উদ্যান, প্রয়াস ভিন্নজগজত , বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাস। নগরীর এ পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর নৈস্বর্গিক দৃশ্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবেই। চিকলী পার্ক নয়ণাভিরাম সৌন্দর্য্য অবলোকনে শিশু থেকে বৃদ্ধদের উপচেপড়া ভিড় যেন লেগেই থাকে। কিন্তু নির্মল পার্কের স্নিগ্ধ-কোমল বিশুদ্ধ বাতাস এখন ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।

ফলে প্রতিদিনই নির্মল বিনোদন উপভোগ করতে আসা আসা শিশুসহ হাজারো বিনোদনপ্রেমিরা ক্রমেই ধূমপায়ীদের বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়ার কবলে পড়ে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিছুদিন রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিনোদনপ্রেমিদের পদচারণায় মুখর রয়েছে। কিন্তু এখন নির্মল পরিবেশে থাকা হাজারো মানুষের ভিড়ের মধ্যেই ধূমপায়ীদের ধূমপানের দৃশ্যে হতবাক হতে হয়।

রীতিমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোষাকেও শিক্ষার্থীদেরও (ইউনিফর্ম) ধূমপান করতে দেখা যায়। যে দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে মূর্তির ন্যয় দাঁড়িয়ে পড়ছে সকলেই। চিড়িয়াখানা ও চিকলী পার্কে বেড়াতে আসা বিনোদন প্রেমিদের ভাবিয়ে তুলেছে।

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা মহানগরীর শালবন এলাকার বাসিন্দা মোঃ আব্দুস সামাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চিড়িয়াখানায় নির্মল বিনোদনের জন্য অত্যন্ত সুন্দর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষের সমাগম বিরাজমান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক প্লেসে কর্মজীবিদের সাথে পাল্লা দিয়ে স্কুল পোশাকে থাকা কিশোর কিশোরীরাও দেদারছে ধূমপান করছে, অথচ এ ব্যাপারে প্রশাসক সংশ্লিষ্টদেরও কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন বসার স্থান ও ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে নানা বয়সের মানুষ আড্ডা দিচ্ছিলো। পাশেই বসে স্কুল-কলেজ পডুয়া শিক্ষার্থী, স্থানীয় টোকাইসহ নানা বয়সী ধূমপায়ীরা ধূমপান করছে। এখনই কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে জনসমাগম স্থলে ধূমপান করতে দেখা গেছে।

পাবলিক প্লেসে কেন ধূমপান করছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অমিত নামে তাদের একজন বলে উঠলেন, কিসের পাবলিক প্লেস। খোলামেলা জায়গায় বসে সিগারেট খাচ্ছি এতে আবার ক্ষতির কী হলো। তাদের মত অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে কিন্তু কেউই তাদেরকে ধূমপান করতে নিষেধ করার সাহস পাচ্ছে না।

শফিক নামে সেখানে বেড়াতে আসা এক বিনোদনপ্রেমী বলেন, চিড়িয়াখানা, সুরভি উদ্যান, চিকলীপার্ক কেন রংপুরের প্রেসক্লাব, সুপার মার্কেট, জেলা পরিষদ মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স যেখানেই আপনি যাবেন এসব ধূমপায়ীদের দেখা মিলবে। এরা অধিকাংশই স্থানীয় কিশোর গ্যাং কিংবা স্থানীয় লোকজন।

তামাক বিরোধী নিয়ন্ত্রণ জোট এ্যাসোসিয়েশন ফর মিডিয়া ডেভলপমেন্টের রংপুরের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিক, এ্যান্টি টোবাকো মিডিয়া এ্যালায়েন্সের রংপুরের সদস্য সাংবাদিক মাহবুবুল ইসলাম জানান. ইতোমধ্যে তারা নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র এবং পাবলিক প্লেসে প্রকাশ্যে ধূমপান থেকে বিরত থাকার জনসাধারণের প্রতি আহবান জানানোর জন্য জেলা বিভাগীয় ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কয়েকদফা লিখিত আবেদন জানালেও কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি এসব আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ফলে এর প্রভাব দিনদিনে বেড়েই চলেছে। অথচ তারা যদি একটু সজাগ হতো তবে হয়তো এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

(এম/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৯)