স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : ফাইটার আছিল মুরগির গবেষণা খামার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ।  ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদ প্রাণিজ আমিষের উৎস এবং গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মোরগ লড়াই’কে টিকিয়ে রাখতে পালন করছে আছিল মুরগি। দুর্লভ প্রজাতির আছিল মোরগের বংশ বিস্তারেও কাজ করছেন তারা। এই আছিল মুরগির খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে অনেকেই। আছিল মুরগির খামার গড়তে অনেকে হয়ে উঠেছে আগ্রহী।

চারপাশে অসংখ্য মানুষের তৈরি বৃত্তে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে দু’টি মোরগ। মোরগের লড়াই দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে ছুঁটে আসে মানুষ। এ খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন উৎসবে ও অন্যান্য মূহুর্তে শিশু কিশোরদের জন্য এই মোরগ লড়াই ছিল এক জমপেশ খেলার নাম। গ্রামবাংলার সচরাচর এই চিত্র সময়ের বিবর্তনে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না। মোগল আমল থেকেই বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মোরগ লড়াই ছিল খুবই প্রসিদ্ধ খেলা। সাধারণ আদিবাসী ও কৃষিভিত্তিক সমাজে এ খেলাটি খুবই আকর্ষণীয় এবং ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবেই বিবেচিত ছিল।

ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসেবে মোরগ লড়াইয়ের সুখ্যাতি থাকলেও লড়াইয়ের মোরগ এবং খেলার ঐতিহ্য- দুই-ই হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে, দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ এই আছিল মুরগির গবেষণা খামার করেছে।এই খামার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জনপ্রিয় ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও বাইরে থেকে অনেক দর্শনার্থী আসছেন আছিল মুরগি দেখতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের অভিটোরিয়াম-২ এর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এই খামার।

লম্বা পা, ইগলের মতো চোখ, কম পালকের দুর্লভ প্রজাতির আছির মোরগ লড়াইয়ের জন্য সেরা। মোরগের নিজস্ব ফ্লাইং কিকের স্টাইলগুলোকে মানুষ বিভিন্ন নামে চিত্রিত করে।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.এম.এ. গাফফার জানান,আসিল মোরগ দেখতে হিংস্র হলেও এরা মারাত্মক প্রভুভক্ত। মালিকের আদর বোঝে, দেখলে ডাকতে থাকে, সামনে দিয়ে ঘুরাঘুরি করে। আদর করে এদের নামও রাখা হয়। প্রভুভক্ত এই মোরগগুলো মালিকের সম্মান রাখার জন্য খেলার মাঠে নিজের জীবন দিয়ে দেবে, কিন্তু হার মানতে নারাজ এই মোরগগুলো।অসম্ভব তেজি ও যোদ্ধা-প্রকৃতির মোরগ, দারুণ উড়তে পারে এরা। এদের পেছনের আঙুলটি এক ইঞ্চির বেশি লম্বা, দেখতে সূচালো পেরেকের মতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছিল মুরগি গবেষণা চলছে। একজন প্রাণিসস্পদ কর্মকর্তা এনিয়ে পিএইচডি করছেন।
ডপএইচডিরত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো.আহসান হাবিব প্রামানিক বলেন,বাণিজ্যিকভাবে আছিলের খামার আমাদের দেশে লাভজনক।আছিলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও নরম এবং এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি একটি প্রজাতি। সবচেয়ে সুবিধা হলো এ জাতের মোরগ পালনে তেমন ঝামেলা নেই, কারণ এরা নিজেরা চরে চরে খায়,অনেক বড় হয়।এ মোরগ প্রাকৃতিক পরিবেশে দ্রুত বর্ধনশীল।

লড়াকু আছিল মুরগির খামার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের এই সাফল্য এখন অনেকের অনৃপ্রেরণা। সহযোগিতা ও পৃষ্টপোষকতা অব্যাহত থাকলে লড়াকু আছিল মুরগি’র খামার গড়ার প্রতিযোগিতাও বাড়বে এমনটাই মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

(এস/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০১৯)