স্টাফ রিপোর্টার : বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর এবার শিগগিরই বাড়ছে সব ধরনের গ্যাসের মূল্য। শুধু আবাসিক কিংবা শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসই নয়, বোতলজাত এলপি গ্যাসের মূল্যও পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

জানা যায়, অন্যবারের মতো এবার সব গ্রাহকের জন্য মূল্যবৃদ্ধির হার সমান না-ও হতে পারে। গ্রাহকভেদে সক্ষমতা অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধি করা যায় কি না, এ বিষয়টি মাথায় রেখে বর্তমানে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ।

এছাড়া এবার গ্যাসের সম্পদমূল্য এবং অনুসন্ধান-উত্তোলন-উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণ-নীতি ঠিক করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা গত মাসে জ্বালানি বিভাগে প্রেরিত এক চিঠিতে এই নীতিনির্ধারণের সুপারিশ করেছিল। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা পাওয়ার পরই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করবে পেট্রোবাংলা।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে দেশে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন গত মহাজোট সরকারের সময় দুই দফায় সিএনজির মূল্য ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। মূলত জ্বালানি তেলের মূল্যহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছিল। এর বাইরে ২০১২ সালের ২৩ মে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। তখন সরকার সবুজ সংকেত না দেওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির আবেদন আমলে নেয়নি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলা সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৩ মে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার দরের তুলনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে প্রতি ইউনিট (এমসিএফ) গ্যাসের মূল্য ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। সেখানে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যথাক্রমে ৫২০ দশমিক ৩০ টাকা, ৪৫৮ দশমিক ৪৩ টাকা, ৩৫৬ দশমিক ৮০ টাকা ও ১৫০ টাকা। সার কারখানায় বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট গ্যাসের মূল্য ৭২ দশমিক ৯২ টাকা, ভারতে ৬১১ দশমিক ১০ টাকা এবং পাকিস্তানে ২৮২ দশমিক ৭৮ টাকা। ক্যাপটিভ পাওয়ারে বাংলাদেশে ১১৮ দশমিক ২৬ টাকা প্রতি ইউনিট গ্যাস, পাকিস্তানে যা ৪৫৮ দশমিক ৪৩ টাকা। এ ছাড়া শিল্পকারখানা এবং সিএনজিতে বাংলাদেশের চেয়ে ওই সব দেশে গ্যাসের মূল্য বেশি।

সর্বশেষ প্রস্তাবে দেখা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা থেকে ৮৪ টাকায় নির্ধারণ, সার কারখানায় ৭২ দশমিক ৯২ টাকা থেকে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১১৮ দশমিক ২৬ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, শিল্পে ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৬৫ দশমিক ৯১ টাকা থেকে ২০০ টাকা, বাণিজ্যিকে ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২৬৮ দশমিক ০৯ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, সিএনজিতে ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৬৫১ দশমিক ২৯ টাকা থেকে ৯০৫ দশমিক ৯২ টাকা করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। তবে নতুন প্রস্তাবনায় এর চেয়েও বেশি মূল্যবৃদ্ধির আবেদন জানানো হবে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজার-তুলনায় আমাদের দেশে গ্যাসের মূল্য কম হওয়ায় বিশ্বব্যাংকও সরকারকে এর আগে একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর জন্য।

(ওএস/এটি/ এপ্রিল ১৭, ২০১৪)