নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেক উদ্দিনের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু এক কলেজ ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় ও  চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, উক্ত চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ঠেকাতে ভিকটিম পরিবারের কাছে ৪৫ লক্ষাধিক টাকা পাবেন বলে দাবী করে চৌকিদার পাহারায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে ভিকাটমের পরিবারকে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান, ওই কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। সে উপজেলার দিবর ইউনিয়নের বাকরইল গুচ্ছগ্রামের মৃত অনিল চন্দ্রের মেয়ে ও সাপাহার সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

ভিকটিমের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক উদ্দিন দীর্ঘ ৫বছর ধরে বিয়ের কথা বলে তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চেয়ারম্যান চাপ সৃষ্টি করে। গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করতে না চাইলে ছোট মেয়ের বিয়ের পর তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করবে বলে বাচ্চাটি নষ্ট করতে বাধ্য করে।

সম্প্রতি, তাকে বিয়ে করার কথা বললে ভিকটিমের কাছে ৪৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবী করে চেয়ারম্যান সাদেক। অভিযোগ ঠেকাতে গত সোমবার থেকে চৌকিদার পাহারায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ভিকটিমের পরিবারকে। এতে সহযোগিতা করছেন দিবর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরকার ও দিবর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি হারুন-অর রশীদরা বলে উল্লেখ করা হয়।

ভিকটিমের মা দৈব্য বালা অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ওই চেয়ারম্যানের সঙ্গে আঁতাত করে ঘটনাটি ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে ৪৫ লাখ টাকা দাবি করছে। আমরা নিজেরাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামে বসবাস করছি। মানুষের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। বর্তমানে মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

অভিযুক্ত নজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাদেক উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। একটি মহল আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে মাঠে নেমেছে। আমি ওই মেয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পাব। আমার কাছ থেকে সে ধার নিয়েছিল। এতটাকা একজন দরিদ্র অসহাস মেয়েকে কেন দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, টাকাটা দিয়েছিলাম দরিদ্র ওই পরিবারকে ভালবেসে। শুধুমাত্র ভালবেসে এতটাকা একটি দরিদ্র মেয়েকে দিয়েছেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি। ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে গর্ভবর্তী করে তার গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, আমি তাকে গর্ভবতী করেছি কে বলেছে। সে অসৎচরিত্রের একটি মেয়ে। কার দ্বারা গর্ভবর্তী হয়েছিল আমার জানা নেই।

পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল কুমার চক্রবর্তী বলেন, গ্রাম পুলিশকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা উভয় পক্ষকে ডেকেছিলাম সমাধান করার জন্য। কিন্তু যখন জানলাম নারি ঘটিত ঘটনা রয়েছে তখন আর কোন বৈঠক সম্ভব নয়। তবে ভিকটিম শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএম/এসপি/নভেম্বর ০৮, ২০১৯)