সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা কেন্দুয়া, (নেত্রকোনা) : বিজ্ঞান মনষ্ক লেখক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, শুধু পাঠ্য বইয়ের লেখাপড়া করলে চলবে না। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা করে ভালো মানুষ হতে হবে। দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। বেশি বেশি বই পড়তে হবে। এই বাংলাদেশের মানুষ যখন পরাধীন ছিল তখন পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র অন্যায় অত্যাচার জুলুম করেছে। সেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি।

জাফর ইকবাল বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধু পুরুষরাই অংশগ্রহণ করেননি নারীরাও যুদ্ধ করেছে। যে দেশের ছেলে মেয়েরা এক সঙ্গে লেখাপড়া করে খেলাধুলা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা করে সেই দেশের মানুষকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না। ড. জাফর ইকবাল আরো বলেন, বাংলা সাহিত্যের কলম জাদুকর কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ আমার সহোদর। তিনি ছোট বেলা থেকেই বেশি বেশি বই পড়তেন। এই বেশি বেশি পড়তেন বলেই তিনি একজন ভালো লেখক সাহিত্যিক এবং একজন ভালো শিক্ষককও ছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের লেখার মধ্যে একটা জাদু আছে। তার লেখা বই যিনি একবার পড়া শুরু করেছেন, তিনি পড়া শেষ না করে বই হাত থেকে রাখতে পারবেননা। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি তার ছিল গভীর শ্রদ্ধা। এটা তার লেখাতেও ফুটিয়ে তুলেছেন। এই শ্রদ্ধা জানাতেই তিনি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। গ্রামের পিছিয়ে পড়া ছেলে মেয়েদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল। এই স্কুলটি এম.পিও ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিনের দাবী ছিল সারা দেশের মানুষের। এ বছর এই বিদ্যালয়টি এম.পিও ভুক্ত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের প্রতি দেশের মানুষের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

সোমবার ১১ নভেম্বর নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ৭১ তম জন্ম বার্ষিকি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ পরিচালানা কমিটির সভাপতি হুমায়ুন আহমেদের পতিœ স্থপতি মেহের আফরোজ শাওনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও নেত্রকোনা-৩ আসনের এম.পি অসীম কুমার উকিল।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমার পবিত্র দায়িত্বই হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড আমার কাঁধে তুলে নেয়া। আজ আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমার নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেমন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছি তেমনি এ বিদ্যালয়টির সার্বিক চাহিদা পূরেণেও কাজ করব। এজন্য ড. জাফর ইকবাল ও হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিটিজেনগ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের পত্নী তানজিলা রহমান, হুমায়ুন আহমেদের ছোট বোন সুফিয়া হায়দার সাফু, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা ও কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ আসাদুল হক ভূঞা।

হুমায়ুন আহমেদের ৭১তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে হুমায়ুন আহমেদের জন্মস্থান কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে বসেছিল সব মানুষের মিলন মেলা। রাজনীতিবীদ, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, মুক্তিযুদ্ধা, সাংবাদিক ও সকল শ্রেনী পেশার মানুষের পদচারনায় কানায় কানায় ভরে ওঠে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি স্থপতি মেহের আফরোজ শাওন, প্রধান অতিথি ড. জাফর ইকবাল ও প্রধান আলোচক এম.পি অসীম কুমার উকিল সহ উপস্থিত সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভালো লেখাপড়া, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি নিজ হাতে সকল অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে দেন।

(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০১৯)