নিউজ ডেস্ক : কালো তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কনসোর্টিয়াম এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নানা কৌশলে তারা এখনো বড় বড় কাজ বাগিয়েও নিচ্ছে। স্বার্থ উদ্ধারে রাজনৈতিক খোলসও পরিবর্তনের চেষ্টা করছে অনেকে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আগ্রাবাদ কনসোর্টিয়াম। নানাভাবে সমালোচিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে তারেক জিয়ার নির্দেশে ২০০৫ সালে সাবেক বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ কনফারেন্স সেন্টার বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সেন্টারটি ১০ (২০০৫-২০১৫) বছরের জন্য বিধিবহির্ভূত লিজ দিয়েছিল বিএনপি সরকার। ওই সময় দরপত্র আহ্বান এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও কৌশলে নানা অনিয়ম করা হয়েছিল। এমনকি কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে তারেক জিয়ার নির্দেশে ওই সময় আগ্রাবাদ কনসোর্টিয়ামের সাথে ওরিয়ন গ্রুপকেও যুক্ত করেছিল।

আগ্রাবাদ কনসোর্টিয়াম দায়িত্ব নেয়ার পর দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সেন্টারটি একটি গার্বেজে পরিণত হয়েছিল। তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস পায়নি। বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের কিনায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে ক্যাটারিং এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজেও আগ্রাবাদ চরমভাবে অবহেলা করেছে। তথ্য মতে, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ চুক্তি অনুযায়ী যে বরাদ্দ রাখার কথা ছিল আগ্রাবাদের, তারা তার ২০ শতাংশ খরচ করতেও গড়িমসি করত। বরং প্রায় সব দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দিত।

ন্যাম সম্মেলনকে সামনে রেখে ২০০২ সালে ২০০ কোটি টাকা গড়া এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারীভাবে পরিচালনার সময়ও বছরে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেছিল। সেখানে বার্ষিক মাত্র ৩ কোটি টাকা চুক্তিতে লিজ নিলেও লিজের টাকা পরিশোধে আগ্রবাদ কনসোর্টিয়াম নানাভাবে তালবাহানা করতো। তারেক জিয়াকে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠানোর কারণে লিজের টাকা ঠিকমত পরিশোধ করা হতো না।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পরীক্ষামূলকভাবে সরকার নিজ দায়িত্বে এক বছর চালিয়ে এই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় করেছে।

২০০৮ সালে আগ্রাবাদের সঙ্গে বিএনপির সরকারের করা অবৈধ চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়। হিসেব অনুযায়ী ২০০৫-২০০৮ সাল; ৪ আর্থিক বছরে সরকারের কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সেন্টারটির ক্যাটারিং ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রথম দফায় প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁওকে এবং পরবর্তীতে রূপসী বাংলাকে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

জনশ্রুতি রয়েছে হোটেল আগ্রাবাদ কর্তৃপক্ষ অবৈধ আর্থিক লেনদেনে বেজায় পটু। তারা যে কোনও কাজই বাগিয়ে নিতে রাজনৈতিক ভোল পালটিয়ে ফেলে। তারা সব আমলেই নিজেদের ‘সরকারের’ আস্থা-ভাজন হিসেবে প্রমাণিত করার চেষ্টা করে।

আগ্রবাদ কনসোর্টিয়াম এর অন্যতম প্রতিষ্ঠান হোটেল আগ্রাবাদ পরিচালনা নিয়েও রয়েছে নৈতিকতা বিরোধী নানা কথা। অসামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি মদ-জুয়ার আসরও বসে ওই হোটেলে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এই হোটেলে তল্লাশি করে এই ঘটনার প্রমাণ প্রমাণ মিলেছে। রাজনৈতিকভাবে আগ্রাবাদ বিএনপির একটি অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। তারেক জিয়ার সঙ্গে তাদের নানা সময়ে নানা ধরণের লেনদেনের ঘটনাও জানা গেছে। এখনো তাদের সঙ্গে বিএনপির নানা অর্থনৈতিক লেনদেন রয়েছে বলে শোনা যায়। আগ্রবাদ কনসোর্টিয়ামের অধিকাংশ পরিচালকই রাজনৈতিকভাবে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সরকারী সূত্র মতে, হোটেল আগ্রাবাদের কাছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বাবদ সরকারের বিপুল পরিমাণ বকেয়া রয়েছে।

জানা গেছে, আগ্রাবাদ এবং তার সহ প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছে। কয়েক দফা তারা এই ঋণ রি-শিডিউল করিয়েছে। কিন্তু রি-শিডিউল অনুযায়ীও ঋণ পরিশোধ করছে না।

এমন সব অনৈতিক ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা নিয়ে আগ্রবাদ কনসোর্টিয়াম এখনো সরকারের ভাবমূর্তিও সাথে সরাসরি জড়িত এমন অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ পাবার ক্ষেত্রে নানা কৌশল অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ আছে।

(এআর/অ/নভেম্বর ১২, ২০১৯)